সিলেটের ৮ টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই এক্সরে মেশিন নষ্ট, অস্ত্রোপচার হয় মাত্র একটিতে

সিলেটের ৮ টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই এক্সরে মেশিন নষ্ট, অস্ত্রোপচার হয় মাত্র একটিতে
অনলাইন ডেস্কঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল শুল্ক স্টেশনের কয়লা শ্রমিক আব্দুল মজিদ। সম্প্রতি কাজ করতে হাত ভেঙ্গে ফেলেন তিনি। সহকর্মীরা তাকে নিয়ে যান স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানানো হয় এক্সরে মেশিন নষ্ট। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে আসতে হয় জেলা শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

কেবল আব্দুল মজিদ কিংবা গোয়াইনঘাটের রোগীরাই নয়, এক এক্সরের জন্য এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় সিলেটের ৮ উপজেলার বাসিন্দাদের। এতে রোগীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি চাপ বাড়ছে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে। নয়শ’ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা নেন আরো প্রায় দুই হাজার রোগী। দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার কারণেও কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সেবাগ্রহীতারা।

জানা যায়, সিলেটের ১৩ টি উপজেলার মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে ১১ টিতে। সদর উপজেলায় সম্প্রতি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ সৃষ্টি হয়নি। ফলে এ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনো। এছাড়া ওসমানীনগর উপজেলায় নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বাকী ১১ টি উপজেলায়ই রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্থ ছাড় না হওয়ায় এখন কেবল বহির্বিভাগের সেবা দেওয়া হয়।

১১ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতেই এক্সরে মেশিন আছে। তবে ৮ উপজেলায়ই দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে এক্সরে মেশিন। কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মিশন নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে এই উপজেলার রোগীদের এক্সরে করার জন্য যেতে হয় বেসরকারি রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানে কিংবা নগরীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

৪ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনেসথেসিয়া মেশিন নষ্ট। এছাড়া এম্বুলেন্স থাকলেও একাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালকের অভাবে তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় এম্বুলেন্স আসলেও চালক না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া সিলেটের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নেই অস্ত্রোপচারের সুবিধা। দু'একটিতে অস্ত্রোপচারের সুযোগ সুবিধা থাকলেও লোকবলের অভাবে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। কেবল বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাকী উপজেলার রোগীদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে আসতে হয় দূরবর্তী জেলা শহরে।

কেবল যন্ত্রপাতি নয়, লোকবল সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সিলেটের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর স্বাস্থ্যসেবা।

সিলেটের সবগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রয়েছে লোকবল সঙ্কট। ১১ টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও সিলেট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে রয়েছে দুটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, একটি কুষ্ঠ হাসপাতাল ও একটি স্কুল হেলথ ক্লিনিক । এই ১৪ প্রতিষ্ঠানে মোট লোকবল সঙ্কট রয়েছে ৫৮৫ জন। এরমধ্যে ২৫৮ টি চিকিৎসক পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২শ’ জন। ৫৮ টি চিকিৎসক পদ খালি আছে। সেবিকার পদ খালি আছে ১২৩ টি। এছাড়া ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীর ৩০৬ টি ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ৯২ টি পদ খালি আছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, লোকবল সঙ্কটের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। এগুলো আস্তে আস্তে পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া সবসময়ই কেউ কেউ অবসরে চলে যায়, কেউ কেউ পদন্নোতি পান। ফলে কিছুটা সঙ্কট সবসময়ই লেগে থাকে। এতে স্বাস্থ্যসেবা খুব একটা ব্যাহত হয় না।

যন্ত্রপাতি সঙ্কট ও নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, নষ্ট থাকা যন্ত্রপাতিগুলো আস্তে আস্তে সংস্কার করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় নতুন মেশিনও দেওয়া হচ্ছে। তবে লোকবল সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় অনেক সময় মূল্যবান যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিলেটের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সঙ্কট সবচেয়ে প্রকট বলে জানান সিভিল সার্জন।

অপারেশন থিয়েটার না থাকা প্রসঙ্গে বলেন, ছোটখাটো অস্ত্রোপচার সবগুলাতেই হয়। বড় অস্ত্রোপচার বিয়ানীবাজার ছাড়া কোথাও সম্ভব হয় না। আরো কয়েকটিতে অস্ত্রোপচারের সুবিধা থাকলেও এনেসথেসিয়ায় পারদর্শী চিকিৎসকের অভাবে তা সম্ভব হয় না। সারাদেশেই এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post