জিয়াউল হক জিয়া: অনেক ধন-সম্পদের মালিক এখন অপু। বাবার রেখে যাওয়া সব কিছু ভোগ করছে সে। অপুর বাবা লাল মিয়া। তিনি বিগত ১০ বছর থেকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। কারণ অপুর স্ত্রী চায় না, শ্বশুরকে বাড়িতে রাখতে। অপুর জন্মের পর তার মা মারা গেছেন। এক কথায় বাবা-ই ছিলেন তার মা-বাবা। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করে ছিলেন সুখের আশায় কিন্তু সুখ আর সইলো কোথায় কপালে? প্রতিদিনের মতো অপু ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখছে তার কাছে এসে কান্না জড়িত কণ্ঠে বাবা বলছেন- অপু, অপু, দেখ বাবা আমি; আমি আসছি। তুমি ভয় পেওনা, আমি থাকতে আসিনি, চলে যাবো বৃদ্ধাশ্রমে। শুধু কিছু কথা বলার জন্য আসলাম। বউ মা কোথায়? তোমরা নিশ্চয় খুব ভালো আছো? আমি প্রচন্ড সুখে আছি, বৃদ্ধাশ্রমে আমার কোনো কষ্টই হচ্ছে না, শুধু একটা শূন্যস্থান সব সময় আমাকে তাড়া করে। আচ্ছা বাবা, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমাকে তুমি এরকম ভুলে থাকতে পারলে কি করে? আমি তো তোমার জন্মদাতা। আচ্ছা; আমি কি তোমার জন্য একটুও ভালো কিছু করিনি, একটুও কষ্ট করিনি, যার জন্য ১০ বছরের মধ্যে একবারও আমার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেনা? আমি তোমাকে দোষ দেই না। যা হয়েছে তা নিশ্চয় আমার কপালে ছিল। দোয়া করি, তোমার বেলা যেনো এরকম না হয়, বৃদ্ধাশ্রমে তুমি থাকতে পারবে না, তোমার অনেক কষ্ট হবে। তোমারও তো একটা ছেলে আছে? আচ্ছা তোমার বুকের ব্যথাটা কি মাঝে মধ্যে হয় এখনও? নিশ্চয় তখন তোমার খুব কষ্ট হয় না, আমার মতো কি কেউ সারা রাত বুক মালিশ করে দেয়? জানিস বাবা ওই বৃদ্ধাশ্রমে আমার মতো আর কেউ সুখি না। কারণ উনাদের আত্মীয়-স্বজনরা মাঝে মধ্যে এসে উনাদেরকে দেখতে আসে। আমার কেউ থেকেও নেইতো, তাই কেউ গিয়ে আমাকে বিরক্ত করেনা। ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করতো আমার কেউ নেই নাকি? আমি শুধু হাসতাম। আর বলতাম আমি একটু নিরিবিলি থাকতে ভালোবাসি তাই কেউ আসে না। অপু, জন্মের পর থেকে আমি তোমার জন্য কত কি করেছি, তোমার মা বাবা দু’জনই ছিলাম আমি, তুমি যখন কাঁদতে আমিও কাঁদতাম। ভাবতাম আমি তোমার মায়ের অভাবটা পূরণ করতে পারছি না। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মা হওয়ার। তার জন্য মনে হয় রাগে ক্ষোভে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখেছো? তোমার মা চলে গিয়ে বেঁচে গেছে, আমিও তখন চলে গেলে তোমাকে কষ্ট করে আমাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে হতো না? যাই হউক অনেক আজেবাজে কথা বলে ফেললাম। তুমি কিছু মনে করো না, আমি যে কথাগুলো বলার জন্যে এসেছি তা বলছি, মন দিয়ে শোনো, আমার অনেক বয়স হয়েছে, কখন কি হয় ঠিক নেই, আমার মৃত্যুর খবর শুনলে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আমার লাশটা এনে তোমার মায়ের পাশে দাফন করে দিও। ভয় করো না, তোমার কোনো টাকা দিতে হবে না। তোমার মায়ের বিয়ের সময়কার একটা স্বর্ণের বালা আমার কাছে স্মৃতি হিসেবে রেখেছিলাম, সবসময় আমার পকেটে থাকে। মৃত্যু’র পর পকেট থেকে বালা নিয়ে বিক্রি করে দাফন-কাফন করবে, কসম আল্লাহর তোমার কোনো টাকা আমার দাফন-কাফনে লাগাবে না। তাছাড়া বউমা শোনলে তোমাকে বকা দিবে। আর আরেকটা কথা, যদি কোনো দিন মনে হয় আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছো, তাহলে সোজা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে ফাতেমা নামের একটা মেয়ে আছে তার কাছে মাফ চাইবে, ও মাফ করে দিলে মনে করো আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি। কারণ ওই মেয়েটা আমার প্রতি তোমার যা দায়িত্ব ছিল, তা পালন করেছে। এবং তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে। আমার ১০ বছরের বৃদ্ধাশ্রমের জীবনে ও সব সময় আমার পাশে ছিলো। আর তুমি আমার নিজের ছেলে হয়ে ১০ সেকেন্ডের জন্য সময় করতে পারো নি, তোমার এতো ব্যস্ততা! ঠিক আছে আমার শেষ ইচ্ছেটা মন চাইলে পালন করো, আর না পারলে ফাতেমাকে তোমার মায়ের কবর দেখিয়ে দিও। আর বিরক্ত করতে চাই না। চললাম, তোমার জন্য শুভ কামনা রইলো।
বাবা বলে চিৎকার করে অপু লাফ দিয়ে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বলে-
বাবা, বাবা আমি তোমার প্রতি অনেক অন্যায় করেছি। আল্লাহ্ আমি আমার বাবার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমাকে তার শাস্তি দাও।
চিৎকার শুনে অপুকে তার স্ত্রী লোপা বলল,
অপু তোমার কি হয়েছে, কাঁদছো কেনো?
চোখ বড় বড় করে রাগান্বিত হয়ে স্ত্রী কে অপু বলল,
চুপ, চুপ, তুমি; আমার সাথে একটাও কথা বলবে না। তোমার জন্য, তোমার জন্য...আমি আমার বাবার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমি বাবাকে আনতে যাচ্ছি.. বাবার সাথে মানিয়ে চলতে পারলে এ বাড়িতে থেকো, আর তা না হলে চলে যেও।
অপু বের হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যায়। বৃদ্ধাশ্রমের গেইটে অবস্থানরত দারোয়ান আলীকে অপু জিজ্ঞেস করলো, ভিতরে এতো মানুষের ভিড় কেন?
আলী বলল, একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন, উনার একটা ছেলে আছে, কপাল পোঁড়া, দশ বছর আগে বাবাকে এখানে রেখে গিয়েছিল তারপর, আর একদিনও আসেনি বাবাকে দেখতে। এরকম ছেলে-মেয়ে কে আমি হলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতাম।
লাশের মাথার পাশে বসে কাঁদছে ফাতেমা। বৃদ্ধা আলেয়া, বৃদ্ধ লিটন পাশে মুখ ভারি করে বসা। বাবার লাশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে অপু তখন বলে, বাবা আমি এখন কি করবো? আমি যে অপরাধী, আমার অপরাধের কোনো মাফ নাই। আল্লাহ্ আমাকেও বাবার সাথে নিয়ে নাও, আমি আমার এ অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই না। বাবা তুমি চলে গিয়ে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে দিলে না।
অপুর পাশে গিয়ে বৃদ্ধা আলেয়া তখন বলেন, বাবা কেঁদে কি আর হবে? উঠো, যা হবার হয়েছে। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো, তুমি যে তোমার বাবার প্রতি অন্যায় করেছো।
এমন সময় অপুর স্ত্রী লোপা এসে হাজির হয়। অপু বলে- এখন তো খুশি হয়েছিস, দেখ আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন অভিমান করে। তোর জন্য মনে হচ্ছে আমি আমার বাবাকে খুন করেছি।
পরে ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে অপুকে দেয় ফাতেমা। বলে আপনার বাবা দুই দিন আগে বলেছিলেন যদি আপনি আসেন চিঠিটি আপনাকে দিতে।
চিঠিটা পড়া শেষে লাশের কাছে গিয়ে বাবার পকেট থেকে ১টা স্বর্ণের বালা বের করে। বালা হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অপু বলে,
বাবা, আমি আপনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবো।
ফাতেমার কাছে গিয়ে হাত জোড় করে অপু বলে, বোন আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন, বাবা লিখেছেন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিলে বাবা খুশি হবেন। দিন না ক্ষমা করে। ফাতেমা বললো ঠিক আছে উঠেন, এখন তাড়াতাড়ি লাশ নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন। আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সব প্রস্তুত করে রেখেছি। পরে লিটন, অপু, সাজু, আলী লাশ নিয়ে বাড়ি রওয়ানা হয়...।
বাবা বলে চিৎকার করে অপু লাফ দিয়ে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বলে-
বাবা, বাবা আমি তোমার প্রতি অনেক অন্যায় করেছি। আল্লাহ্ আমি আমার বাবার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমাকে তার শাস্তি দাও।
চিৎকার শুনে অপুকে তার স্ত্রী লোপা বলল,
অপু তোমার কি হয়েছে, কাঁদছো কেনো?
চোখ বড় বড় করে রাগান্বিত হয়ে স্ত্রী কে অপু বলল,
চুপ, চুপ, তুমি; আমার সাথে একটাও কথা বলবে না। তোমার জন্য, তোমার জন্য...আমি আমার বাবার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমি বাবাকে আনতে যাচ্ছি.. বাবার সাথে মানিয়ে চলতে পারলে এ বাড়িতে থেকো, আর তা না হলে চলে যেও।
অপু বের হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যায়। বৃদ্ধাশ্রমের গেইটে অবস্থানরত দারোয়ান আলীকে অপু জিজ্ঞেস করলো, ভিতরে এতো মানুষের ভিড় কেন?
আলী বলল, একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন, উনার একটা ছেলে আছে, কপাল পোঁড়া, দশ বছর আগে বাবাকে এখানে রেখে গিয়েছিল তারপর, আর একদিনও আসেনি বাবাকে দেখতে। এরকম ছেলে-মেয়ে কে আমি হলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতাম।
লাশের মাথার পাশে বসে কাঁদছে ফাতেমা। বৃদ্ধা আলেয়া, বৃদ্ধ লিটন পাশে মুখ ভারি করে বসা। বাবার লাশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে অপু তখন বলে, বাবা আমি এখন কি করবো? আমি যে অপরাধী, আমার অপরাধের কোনো মাফ নাই। আল্লাহ্ আমাকেও বাবার সাথে নিয়ে নাও, আমি আমার এ অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই না। বাবা তুমি চলে গিয়ে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে দিলে না।
অপুর পাশে গিয়ে বৃদ্ধা আলেয়া তখন বলেন, বাবা কেঁদে কি আর হবে? উঠো, যা হবার হয়েছে। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো, তুমি যে তোমার বাবার প্রতি অন্যায় করেছো।
এমন সময় অপুর স্ত্রী লোপা এসে হাজির হয়। অপু বলে- এখন তো খুশি হয়েছিস, দেখ আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন অভিমান করে। তোর জন্য মনে হচ্ছে আমি আমার বাবাকে খুন করেছি।
পরে ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে অপুকে দেয় ফাতেমা। বলে আপনার বাবা দুই দিন আগে বলেছিলেন যদি আপনি আসেন চিঠিটি আপনাকে দিতে।
চিঠিটা পড়া শেষে লাশের কাছে গিয়ে বাবার পকেট থেকে ১টা স্বর্ণের বালা বের করে। বালা হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অপু বলে,
বাবা, আমি আপনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবো।
ফাতেমার কাছে গিয়ে হাত জোড় করে অপু বলে, বোন আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন, বাবা লিখেছেন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিলে বাবা খুশি হবেন। দিন না ক্ষমা করে। ফাতেমা বললো ঠিক আছে উঠেন, এখন তাড়াতাড়ি লাশ নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন। আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সব প্রস্তুত করে রেখেছি। পরে লিটন, অপু, সাজু, আলী লাশ নিয়ে বাড়ি রওয়ানা হয়...।
