কুলসুমা আক্তার: হার না মানা এক স্বপ্ন স্বারথি

কুলসুমা আক্তার: হার না মানা এক স্বপ্ন স্বারথি
এস আলম সুমন/এ কে এম জাবেরঃ চাল চুলোহীন এক খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান কুলসুমা আক্তার, পরের আশ্রয় ও দারিদ্রতার সাথে যার নিত্য বসবাস, সেই মেধাবী কুলসুমা সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ যেন জীবন যুদ্ধে হার না মনা এক অভূতপূর্ব জয় ! অভাবের বাধাগুলো অতিক্রম করে ছিনিয়ে এনেছে তার অর্জিত সাফল্য। একদম স্বপ্ন স্বারথি হয়ে...।

দেড় বছর বয়সে কুলসুমার পিতা জাহেদ মিয়া মারা যাওয়ার পর মা খোরশেদা বেগমকে বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তাদের দুবোনকে বড় করেন।

কুলসুমা জানায়, ৭ম শেণিতে পাসের পর ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য স্কুলের ফি’র টাকা তার ছিলোনা। এসময় কুলাউড়ার সামাজিক সংগঠন সোশ্যাল কেয়ার অব ন্যাশনের শাওন ভাই, উজ্জ্বল ভাই, মাহিন ভাই ও জাফর ভাই বিষয়টি জানতে পেরে আমার স্কুলের ভর্তি ফি এবং আমার বই খাতা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তারা আমাকে বলেন তুমি পড়াশুনা কর, তোমার পড়ার খরচের যাবতীয় দায়িত্ব আমারা নিয়েছি। এ নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা করনা। তাদের অনুপ্রেরণা এবং আমার স্কুলের সেলিম স্যার ও জয়নাল স্যার এবং খালাতো ভাই সাইফুল ইসলাম নাসিরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি এবার জেএসসিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। আমি ভবিষ্যতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চাই। ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবো। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সোশ্যাল কেয়ার অব ন্যাশনের শাওন ভাই, উজ্জ্বল ভাই, মাহিন ভাইয়েরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন তবুও ভবিষ্যতে আমার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। তাছাড়া মাথা গোঁজার ঠাই নেই পরের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকি। আমার স্বপ্ন কি শুধুই স্বপ্ন থেকেই যাবে?

কুলসুমার মা খোরশেদা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে নিয়ে অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাই ছিলনা। তখন কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক প্রভাষক ফরিদা বেগম তাদেরকে তাঁর বাসায় আশ্রয় দেন। তিনি (ফরিদা বেগম) স্বপরিবারে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় আমাদেরকে তাঁর বাসা দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে যান। এজন্য প্রতি মাসে ফরিদা বেগম আমাদেরকে টাকা দেন সেটা দিয়ে কোনমতে সংসার চালাই। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েটা (কুলসুমা) পড়াশুনায় খুব ভালো। অন্যদের সহযোগিতায় এবারের জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা দুমোঠো খাবার যোগানো যেখানে কষ্টকর সেখানে তার পড়াশুনার খরচ কিভাবে চালিয়ে যাবো সেই দুশ্চিন্তায় আছি।


সামাজিক সংগঠন সোশ্যাল কেয়ার অব ন্যাশনের সভাপতি খায়রুল কবির জাফর, সহ-সভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম মাহিন ও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আজিজুল ইসলাম উজ্জল জানান, আমাদের সহযোগীতা ও কুলসুমার অক্লান্ত পরিশ্রমে সে জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে অনেক মেধাবী। তার স্বপ্ন পূরণের পথে দারিদ্রতার সকল বাধা উপক্রম করে সে এই সফলতা অর্জন করেছে। ভবিষ্যতেও আমরা আমাদের সাধ্যমত তার পাশে থাকবো। তাছাড়াও ভবিষ্যতে যাতে কুলসুমার উচ্চতর পড়াশুনার জন্য দারিদ্রতা কোন বাধা হয়ে দাড়াতে না পারে সেজন্য সমাজের সকল বিত্তবান ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

Post a Comment

Previous Post Next Post