হাঙ্গেরি সফরশেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

হাঙ্গেরি সফরশেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্কঃ ঘটনাবহুল এক সফর শেষে পূর্ব ইউরোপিয় দেশ হাঙ্গেরি থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পানি সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি যান এবং সেখানে ওই সম্মেলন ছাড়াও তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাত ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

গত রোববার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিকালে বুদাপেস্টে পৌঁছানোর কথা থাকলেও বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করতে হয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের। সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রা বিরতির পর বিমান সারিয়ে নিরাপদে বুদাপেস্টে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ ‘রাঙা প্রভাত’ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। দুই ইঞ্জিনের একটিতে ‘ফুয়েল প্রেশার’ হঠাৎ কমতে শুরু করায় তাৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হিসেবে আশখাবাতে বিমানটি জরুরি অবতরণ করানো হয় বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনায় দায়িত্বে গাফিলতির কারণে বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি থেকে ফিরেছেন বিমানেরই আরেকটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ, আকাশ প্রদীপে করে। বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৩টায় বুদাপেস্টের ফিরেন্স লিজৎ বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে যাত্রা করে বিমান। বিদায়ের সময় হাঙ্গেরির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায়।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও হাঙ্গেরিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ব‌্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

এর আগে বিমানের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রুটি সারিয়ে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সফরে তিনি অবস্থান করেন ফোর সিজনস হোটেল গ্রেশাম প্যালেসে।

সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিটে যোগ দেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। ওইদিনই তিনি ‘সাসটেনেইবল ওয়াল্ড এক্সপো’ পরিদর্শন করেন। রাতে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট হ্যানোস আদেরের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সফরের তৃতীয় দিনের শুরুতে হিরোজ স্কয়ারে হাঙ্গেরির জাতীয় নেতা ও সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে কসুথ স্কয়ারে তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। হাঙ্গেরির সংসদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন তিনি। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পানি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল হাঙ্গেরি। ইউরোপের যে দেশগুলো স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের মধ‌্যে হাঙ্গেরি অন‌্যতম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে হাঙ্গেরির দূতাবাস বন্ধ করে দেয় সে দেশের সরকার। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকায় আবারও হাঙ্গেরির দূতাবাস খুলতে পারে বলে ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে শেখ হাসিনা পানি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপতির দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও যোগ দেন তিনি। বিকালে হাঙ্গেরি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। পরে হোটেলে ফিরে সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post