ঔষধ নেই,রোগী দেখলেই ৩০ টাকা

তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবা: মৌলভীবাজার কাগাবলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

 ঔষধ নেই,রোগী দেখলেই ৩০ টাকা

ইমাদ উদ দীন: দরিদ্র মানুষের ভরসার হাসপাতালটি নিজেই রোগী। এমনটিই জানালেন ওখানকার স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতারা। কাগাবলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও নেই পর্যাপ্ত ঔষধ ও ডাক্তার। আর যে দু’জন ডাক্তার আছেন রোগীর ব্যবস্থা পত্র দিলেই জনপ্রতি তাদের দিতে হয় ৩০ টাকা। গতকাল সরজমিনে দেখাগেল স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির আয়া নেহারুন নেছা রোগীদের সিরিয়ালের টিকেট দিচ্ছেন। টিকেট হাতে বেশ কয়েকজন রোগী দীর্ঘক্ষণ ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বারান্ধায় অপেক্ষারত। ডাক্তারের দেখা পেতে অপেক্ষায়ও বেশ কয়েকজন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটেটিভ। তাদের মোটরসাইকেল আর ভীড় সামলে অনেকটা বিরক্ত হয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ঢুকছেন চিকিৎসা নিতে আসা মহিলা ও শিশুরা। তখন দুপুর ১২ টা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসলেন ওই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা: মলয় ভূষণ দেব। তার ৫ থেকে ১০ মিনিট পর আসলেন ওই কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য পরির্দশিকা মাজেদা খাতুন। ডাক পড়ল রোগীদের।একে একে রোগীরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হচ্ছেন কোন ঔষধ ছাড়াই। কথা হল তাদের কয়েকজনের সাথে। মিলনপুর থেকে আসা শিবলী মিয়ার স্ত্রী রাহেলা বেগম,নওয়াগাঁও গ্রামের মিশুক মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম,মিলনপুর গ্রামের আলী আদরের স্ত্রী ও আথানগিরির পারভীন আক্তারসহ অনেকের সাথে। তারা জানালেন আর্থিক সংঙ্গতি না থাকায় তারা ওখানে আসেন। ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য তাদের অনেকেই ডাক্তার কে দিয়েছেন ২০ টাকা। আবার কেউ কেউর কাছ থেকে রাখা হয়েছে ৩০ টাকাও। হাতের ব্যাবস্থা পত্র দেখিয়ে বলেন এটা দিয়ে এখন ঔষধ কিনব। জানা গেল প্রতিদিনই ওখানে সেবা নিতে আসেন ৭০ থেকে ৮০জন রোগী। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। তবে সেবাগ্রহীতাদের অধিকাংশই আর্থিক সংঙ্গতিহীন। বলা যায় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের একমাত্র ভরসা। কিন্তু ওখানেও এসে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র গ্রহণের জন্য তারা যেমন দিচ্ছেন টাকা। তেমনি ফ্রি ঔষধ না থাকায় ঔষধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

 ঔষধ নেই,রোগী দেখলেই ৩০ টাকা
স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা: মলয় ভূষণ দেব জানালেন, অপর্যাপ্ত ঔষধ থাকায় সাধারণ রোগীরা ঔষধ কম পাচ্ছেন। তবে পরিবার পরিকল্পনার জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ তারা দিচ্ছেন বলে দাবী করেন। তিনি জানান ৬টি পদের বিপরীতে ওখানে কর্মরত আছেন ৪ জন। কিছু দিন আগেও যেখানে কর্মরত ছিলেন ২জন। বর্তমানে মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাস্টি এই পদ দু’টিই শুন্য।এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রেরের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গেল মাসে তারা ৬০২ জন সাধারণ রোগী, শিশু ২৮৩জন,গর্ভবতী ২২৭জন, প্রসব সেবা ২৮জন, প্রসব পরবর্তী ৪৫ জন রোগীকে তারা সেবা দিয়েছেন। তবে জরাজীর্ণ ভবনের নানা ত্রুটি উল্লেখ করে তা মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করলেন তিনি। ভয়াবহ অবস্থায় দেখা গেল ওই ইউনিয়নের ২নং ওর্য়াডে অবস্থিত আগিউন ধনদাশ উপ-স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেরের। শনিবার সকাল ১০টা থেকেই ২টা পর্যন্ত ওই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের দরজায় ঝুলছিল তালা। জরাজীর্ণ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে চরানো হচ্ছে গরু। খুঁটিতে বেঁধে কয়েকটি গরুকে ঘাসও খাওয়ানো হচ্ছে। স্থানীয়রা জানালেন এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির স্বাস্থ্য সহকারী ডা: অনন্ত কর্মকার তার খেয়াল খুশিমতই চালান এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে তিনি সপ্তাহে প্রায় দিনই থাকে অনুপস্থিত। রোগী আসলেই ঔষধ নেই বলে তাড়িয়ে দেন। একসময় এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটির নাম ডাক আর চিকিৎসা সেবার খ্যাতি থাকলেও এখন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তা বিলিন হচ্ছে। আগে এখনকার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার স্বপরিবারে ওখানের কোয়াটারে থেকে চিকিৎসা চালাতেন। এখন সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় তা যেন দীর্ঘ পুরাতন অতীত। ক্ষোভের সাথে এমনটিই জানালেন রামপুর গ্রামের বাবুল হোসেন, ধনদাশ গ্রামের সুজন মিয়া, আব্দুল মুমিন ও শফিকুর রহমান। জেলার সদর উপজেলার এই ইউনিয়নটির নাম কাগাবলা। জানা যায় ৩২টি গ্রাম নিয়ে এই ইউনিয়নের লোক সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। স্বচ্ছল ও প্রবাসী থাকলে এই ইউনিয়নটিতে অভাবী ও খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। চিকিৎসা, স্যানিটেশন আর প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা বেহাল দশায়। তাই রোগবালাই তাদের নিত্য সঙ্গী। প্রতিদিনই গতর খাটা পরিশ্রমেই যাদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা নেই। তাদের রোগ তাড়াতে সাধ্য কোথায়। আর্থিক সংঙ্গতি না থাকায় তাই স্থানীয় ওই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রই তাদের রোগ নিরাময়ের একমাত্র ভরসাস্থল। তারা জানালেন সবসময় জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে তখন মুর্মূর্ষ অবস্থায় নানা ঝক্কি ঝামেলা মাড়িয়ে মৌলভীবাজার সদরে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। কিন্তু ওখানে ভর্তি হতে এসেও পড়তে হয় হাসপাতালের দালালদের খপ্পরে। তখন ভোগান্তির আর শেষ থাকে না তাদের। তবে ভিন্ন চিত্র ওই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী আমতৈইল ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেরের। ওখানকার কর্মরত ডাক্তারার সময়মত এসে রোগীদের যেমন স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। তেমনি সেবা গ্রহীতারাও তাদের কাঙ্খিত সেবা পেয়েও সন্তুষ্ট হচ্ছেন। আমতৈইল ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেরের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা: সঞ্জু মোহন দেব ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা জ্যোতিরাণী দেব জানান, পর্যাপ্ত ঔষধ ও নিরাপদ খাবার পানির সমস্যাসহ নানা সমস্যা থাকারপরও তারা সকলের সহযোগীতায় আশানুরুপ সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান সবসময়ই। তাদের কথায় সায় দিয়ে ওই কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা সাতাল গ্রামের জসিম মিয়ার স্ত্রী জলি বেগম, আমতইল গ্রামের মহিমা আক্তার, রুবি আক্তার , আলেয়া আক্তারসহ অনেকেই জানালেন তারা ওখান থেকে টাকা ছাড়াই ঔষধ ও ব্যবস্থাপত্র পান। জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ও আজীবন সদস্য,মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, স্থানীয় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার এমন করুন চিত্র সব সময়ই দৃশ্যমান। তিনি এই মানবিক ও সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের আরো সচেতন হয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মৌলভীবাজার কাগাবলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

Post a Comment

Previous Post Next Post