কুলাউড়ায় শিক্ষক লাঞ্চিত: প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

কুলাউড়ায় শিক্ষক লাঞ্চিত: প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল মালাকারকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে ফাহিম আল রাজি শুভ (২৫) ও মোস্তাকিম (১৮) নামের দুই বখাটে। বর্তমানে তিনি কুলাউড়া সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রবিবার (০৭ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫ টায় স্কুল থেকে কুলাউড়া পৌর শহরে নিজ বাসায় ফেরার পথে কর্মধা ইউনিয়নের বুধপাশা গ্রামের ডানের মোড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে শিক্ষক পরিমল মালাকার নিজে বাদী হয়ে কুলাউড়্ াথানায় মামলা দয়ের করেছেন। 

এদিকে আজ সোমবার (০৮ আগস্ট) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ০১ টা পর্যন্ত রবিরবাজার-মুড়ইছড়া সড়ক অবরোধ করে বখাটেদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকার সর্বস্তরের জনগন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা গাছের গুড়ি, বাঁশ, স্কুলের বেঞ্চ ফেলে সড়ক অবরোধ করেছে। কর্মধা ইউনিয়নের সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো স্কুল শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য শিক্ষক পরিমল গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা শুভ মোটরসাইকেল নিয়ে নিজেকে সাবেক ছাত্র পরিচয় দিয়ে শিক্ষক পরিমল মালাকারকে এগিয়ে দিয়ে আসার অযুহাত দিয়ে মোটর সাইকেলে তুলে। কিছুদূর যাওয়ার পর হায়দরগঞ্জ বাজার থেকে আরেক বখাটে মোস্তাকিমকে তার গাড়িতে তুলে শুভ। এরপর কিছু সামনে এসে হঠাৎ শিক্ষক পরিমলকে সে জিজ্ঞাসা করে স্কুলে নির্বাচন করলে চেয়ারম্যানের (ইউপি চেয়ারম্যান মো: আতিকুর রহমান) অনুমতি নেয়া লাগে না নি? এসময় তার সাথে থাকা মোস্তাকিম শিক্ষক পরিমলকে এলাপাতাড়ি মারধর শুরু করে। তিনি আত্মরক্ষার্থে চিৎকার দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আহত শিক্ষককে উদ্ধার ও ধাওয়া করে ওই দুই বখাটেকে আটক করেন।

এসময় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে শুভ ও মোস্তাকিমকে আটক করে গণধোলাই দেয়। অবস্থার বেগতিক দেখে কুলাউড়া থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে জনতার ক্ষোভের ¯্রােতে তারা ফিরে আসে। পরে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে এস আই আবুল বাশার তাদের উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে আসলে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ শুভ ও মোস্তাকিমকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে তাদেরকে এ ঘটনায় আটক দেখিয়ে কুলাউড়া থানার পুলিশী পাহাড়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

জানা যায়, গত কিছুদিন আগে হায়দরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুল ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আতিকুর রহমান আতিক। পরিচালনা পর্ষদের সর্বমোট ভোট ০৯ টি। আর সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হোন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, হায়দরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নব গঠিত কমিটিতে কর্মধা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুলকে সভাপতি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আতিকুর রহমান আতিকের স্বজনরা। চেয়ারম্যান আতিকের ভাগ্নে শুভ পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক পরিমলকে মারধর করে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য উস্তার আলী জানান, অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি দোষীদের শাস্তি দাবী করছি। কিছুদিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত হোন। মূলত পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনকে ঘিরে এঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার বলেন, জনতা ওই দুই যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান, এ বিষয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশী পাহাড়ায় সিলেটে চিকিৎসাধীন আছে।

উল্লেখ্য ফাহিম আল রাজি শুভ কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের মিঠুপুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে ও কর্মধা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানের ভাগ্নে এবং মোস্তাকিম কর্মধা ইউনিয়নের বুধপাশা গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে।

Post a Comment

Previous Post Next Post