কুলাউড়া হাসপাতালের মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো!

কুলাউড়া হাসপাতালের মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো!
এস আলম সুমন: কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন, ব্যাক্টেরিয়া সনাক্তকারী যন্ত্র ইনকিউবেটর, ডেন্টাল ইউনিট ও ই-সিজি মেশিনসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও টেকনিশিয়ানের অভাবে এগুলো অকেজো থাকার কারণে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে এসব যন্ত্রপাতি। এতে করে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা নিরুপায় হয়ে অধিকমূল্যে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ল্যাব এ ২০০৬ সালে অতি মূল্যবান ব্যাক্টেরিয়া সনাক্তকারী কালচারাল ইনকিউবেটর বরাদ্দ দেয়া হয়। এরকম ইনকিউবেটর জেলার মধ্যে শুধুমাত্র মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া হাসপাতালে রয়েছে। একটি ইনকিউবেটর মেশিনের মূল্য আনুমানিক ২৫-২৬ লাখ টাকা। ইনকিউবেটর দ্বারা রক্ত, প্র¯্রাব, কফ কালচারের মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল রোগের ব্যক্টেরিয়া সনাক্ত করা হয়। ইনকিউবেটরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আগার, পেট্রিডিস, প্লাটিনাম লুপ, বার্ণারসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। কিন্তু এ সকল উপকরণ সরবরাহ না থাকায় মূল্যবান এই ইনকিউবেটরটি অলস পড়ে আছে। এই মেশিনটি বন্ধ থাকায় ল্যাবের হট এয়ার ওভেনটিও বন্ধ রয়েছে। মেশিনটি চালু থাকলে ৩ শ থেকে ৪ শ টাকায় হাসপাতালেই বিভিন্ন টেস্ট করতে পারবেন রোগীরা। প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসব টেস্ট করালে ৮ শ থেকে হাজার টাকা দিতে হয়। এদিকে হাসপাতালে ১৯৯৫ সালে স্থাপিত এক্স-রে মেশিনটি টেকনিশিয়ান পদ শূন্য থাকায় ১৯৯৮ সাল থেকে সেটিও অকেজো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা লিখিতভাবে জানালেও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। গত তিন বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফ) মেশিন প্রদান করা হলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে সেটিও রয়েছে প্যাকেটবদ্ধ অবস্থায়। হাসপাতালের দন্তরোগ এর চিকিৎসক ডা. সুমিত রঞ্জন বসাক ৮ মাস ধরে ডেপুটেশনে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ডেন্টাল ইউনিটটিও অলস পড়ে আছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান হাসপাতালের মূল্যবান এই যন্ত্রগুলো অকেজো পড়ে থাকায় নিরুপায় হয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয় তাদের। এই সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরীক্ষার নামে অতিরিক্তি টাকা লুফে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ঠকতে হবেনা সাধারণ রোগীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব ইনচার্জ সাঈদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ইনকিউবেটর যন্ত্রটি অতি মূল্যবান এবং এর টেস্ট অনেকটাই ব্যয়বহুল। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ল্যাবে একটি ইনকিউবেটর রয়েছে। এছাড়া শুধুমাত্র কুলাউড়া হাসপাতাল ছাড়া জেলার আর কোন হাসপাতালে এটি নেই। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে এটি বন্ধ থাকায় জটিল রোগের পরীক্ষার জন্য রোগীদের সিলেট ও ঢাকায় যেতে হয়। এটি যদি চালু থাকত তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে হাসপাতালেই জটিল রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হতো। ল্যাবের রুমটি খুবই ছোট থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো গাদাগাদি করে রাখতে হয়। এতে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এছাড়াও টেস্টের জন্য আসা রোগীদের ল্যাবের বাইরে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং ল্যাবের জন্য আলাদা কোন বাথরুম না থাকায় প্র¯্রাব পরীক্ষার জন্য রোগীদের জরুরি বিভাগের বাথরুমটি ব্যবহার করতে হয় বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, আমরা প্রত্যেক মাসে স্বাস্থ্য কমিটির সভায় সিদ্ধান্তক্রমে হাসপাতালের লোকবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করি। টেকনিশিয়ান পদের সনদধারী লোকের অভাব থাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে লোক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post