এস আলম সুমনঃ “বর্ষার স্মিগ্ধতায় সাদা ফুল ফুটে,
জেগে ওঠে কত স্মৃতি / আকাশে ভাসে তুলো-মেঘ, জলে ভিজে বিষন্ন প্রকৃতি”
এভাবেই বর্ষার অপরূপ প্রকৃতির কথা কবির ভাষায় ওঠে এসেছে বারবার। ষড় ঋতুর
দেশ বাংলাদেশে বিভিন্ন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি সাজে তার আপন স্বকীয়তায়।
বর্ষায় বৃক্ষরাজি থেকে শুরু করে জলে সর্বত্রই ফুটা বিভিন্ন রঙের ফুলে
বৈচিত্রময় হয়ে ওঠে প্রকৃতি। সেই বৈচিত্রময় রূপকে নিয়ে কবি, সাহিত্যিক ও
প্রকৃতিপ্রেমীদের কৌতুহলের শেষ নেই। হাওর-ঝিলবিল বা পুকুরে বিভিন্ন ফুলের
ন্যায় শুভ্রতার প্রতীক সাদা পদ্ম ফুল ফুটে। যার বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera. এর নাম আবিষ্কারক বিজ্ঞানী Gaertn. সাদা পদ্ম আবার পদ্ম কমল নামেও পরিচিত।
মৌলভবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের করিমপুর টি কোম্পানী
লিমিটেডের বরমচাল চা বাগানে গেলে সবুজ প্রকৃতির ছায়া নিবিড় পরিবেশে একটি
ছোট্ট পুকুরে চোখে পড়বে সাদা পদ্ম বা পদ্ম কমল। সবুজের সমারোহে সাদা পদ্ম
এমন দৃশ্য দর্শণার্থীদের নজর কেড়ে নিবে অনায়াসেই। বাগানের শ্রমিক নেপাল দাস
জানান প্রতিবছরের বর্ষাকালে এই পুকুরে সাদা পদ্ম ফুটে। এই ফুল পূজোর জন্য
চা শ্রমিকরা ব্যবহার করে। পদ্ম ফুল ও ফল (পদ্ম চাক) এর ভিতরে থাকা বীজ বা
বোটা আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগের জন্য খুবই উপকারী। ঔষধী গুণ ছাড়াও পদ্ম চাক ও
বীজ বা বোটা সুস্বাদু খাবার।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে পুকুর-জলাশয়, লেক ও হাওর-বিলে গোলাপী পদ্ম সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। সেই তুলনায় সাদা পদ্ম বা পদ্ম কমল অনেকটাই অপ্রতুল। তবে একসময় প্রায়ই দেখা যেত লাল ও সাদা এই দুই রঙের পদ্ম। এই পদ্ম লেক, পকুর ও বিলের পরিস্কার পানিতে জন্মে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পদ্ম ফুল ও এর ফল (পদ্ম চাক) পরিষ্ফোটিত। সরু কাটা ভরা পদ্ম চাকটি দেখতে অনেকটা সবুজ ও হলদেটে। পদ্মচাক এর ভিতরে রয়েছে বীজ বা বোটা। আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে সাদা পদ্ম বিলুপ্তির পথে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা না হলে সাদা পদ্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমনটি অভিমত উদ্ভিদবিদদের।
জুড়ী তৈয়বুন্নেছা খানম ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও হাকালুকি হাওরের উদ্ভিদ বৈচিত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমফিল গবেষণা সম্পন্নকারী ফরহাদ আহমদ বলেন, পদ্ম জলজ পরিবেশের উৎকৃষ্ট উপদান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পদ্ম’র ভূমিকা রয়েছে। সাদা পদ্ম বা পদ্ম কমল নামেও পরিচিত। সাদা পদ্মের উৎস স্থল জাপান ও নর্থ অস্ট্রেলিয়া। এটি এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলায় বিলুপ্তপ্রায় সাদা পদ্ম এখনও দেখা যায়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকলুকি তীরবর্তী কভাটেরা ইউনিয়নের রাউৎগাঁও গ্রামের একটি পুকুরে এই পদ্ম রয়েছে। সাদা পদ্ম’র অনেক ঔষধী গুণ রয়েছে। এর ফলের বিজ হৃদপীন্ড, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঔষধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ডায়রিয়া রোগ সারাতে এর বোটা কাঁচা খেলে উপকারে আসে।