এস আলম সুমন, কুলাউড়া:
পেট্রোলের বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’টি জেনারেটর বন্ধ রয়েছে গত একমাসের বেশি সময় ধরে।
এতে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় প্রচন্ড গরম ও
অন্ধকারে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য
ব্যবহৃত দুটি জেনারেটর মেরামতের অভাবে দীর্ঘদিন অকেজো পড়েছিল। এ বছরের
ফেব্রুয়ারি মাসে জেনারেটর দুটি মেরামত করে আবার চালু করা হয়। কিন্তু তিন
মাস চালুর পর পেট্রোল না থাকায় গত ২৪ মে থেকে জেনারেটগুলো বন্ধ রয়েছে।
পেট্রোলের বকেয়া বিল ১২ হাজার ৮শ ৯৮টাকা পরিশোধ না করায় কুলাউড়ার হাজী
ফরমুজ আলী পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ পেট্রোল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। উপজেলা
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহা. মিজানুর রহমানকে বিষয়টি
জানালেও এ ব্যাপারে তিনি উদাসীন রয়েছেন। শুধুমাত্র হাসপাতালের বাজেটে
বরাদ্দ আসার অপেক্ষা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোডশেডিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় হাসপাতালে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং সেবিকারা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে বসে আছেন। জরুরি বিভাগে ডাক্তার ও তাদের সহকারীরা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে কাটা ছেড়া ও গুরুতর আহত রোগীদের ব্যান্ডেজ ও সেলাই করছেন। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ভর্তি রোগীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। মোমবাতির আলোয় নার্সরা রোগীদের স্যালাইন ও ইন্জেকশন দিচ্ছেন। গরমে অনেকটা অস্থির রোগীরা। বিশেষ করে অ্যাজমা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারেন্ট চলে গেলে হাসপাতালের কেউই চার্জার লাইট অথবা মোমবাতি জ্বালাননা। জেনারেটরের বিষয়ে ডাক্তার ও নার্সদের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমরা কিছু জানিনা, কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন’। বেশি গরম পড়ায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। জেনারেটর বন্ধ থাকায় গরম ও অন্ধকারে বিপাকে পড়েছি। নিজেদের টাকায় মোমবাতি কিনে এনে জ্বালাতে হয়। এদিকে ইপিআই কর্মসূচির মূল্যবান ঔষধ ও টিকা গরমে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঔষধগুলো দুটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। ঐ সময় জেনারেটর চালু করতে না পারায় ফ্রিজগুলোও বন্ধ থাকে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে সংরক্ষণকৃত ঔষধগুলো গরমে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক অঞ্জন মনি কর অচিন্ত জানান, দীর্ঘদিন অকেজো থাকার পর প্রায় ৬০ হাজার টাকা দিয়ে পুরোনো জেনারেটর দুটি মেরামত করে চালু করা হয়েছে। এখন পেট্রোলের অভাবে এগুলো বন্ধ রয়েছে। বেশিদিন বন্ধ থাকলে এগুলো আবার অকেজো হয়ে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহা. মিজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি।
মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা: সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, পেট্রোল বাবদ অনেক টাকা বকেয়া পড়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাই বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত জেনারেটর চালু করা সম্ভব না। তবে ডা. মিজানুর রহমানকে বলেছি উপজেলা পরিষদকে বিষয়টি জানিয়ে পরিষদের তহবিল থেকে জেনারেটরের পেট্রোলের জন্য টাকার ব্যবস্থা করে আপাতত সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে। যদি মিজানুর তা না করেন তাহলে আমি নিজে উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে বলে এগুলো চালুর ব্যবস্থা করব।