কুলাউড়া ডাকঘরের সংস্কার কাজের টাকা লুটের চেষ্টা

কুলাউড়া ডাকঘরের সংস্কার কাজের টাকা লুটের চেষ্টা
এস আলম সুমন, কুলাউড়া: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা ডাকঘরের সংস্কারের সরকারি টাকা লুটপাটের চেষ্টা চলছে। সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় খুবই নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করেই বরাদ্দকৃত টাকা লুটের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় জরাজীর্ণ ডাকঘরগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবহিকতায় কুলাউড়া উপজেলা ডাক ঘরে ৫ লক্ষ ৪৫হাজার টাকা ব্যায়ে সংস্কার কাজ শুরু হয় চলতি বছরে। গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. শাসুল আলম স্বাক্ষরিত ওয়ার্ক অর্ডারে সিলেট বিভাগীয় ডেপুটি জেনারেল পোস্ট মাস্টার মোহাম্মদ ইউছুফ ও সহকারী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম সার্কেল) জহিরুল ইসলামকে সংস্কার কাজ তদারকি ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্নে নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কোন প্রকার দরপত্র ছাড়াই কুমিল্লার ‘আমিন এন্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিকভাবে কাজ পাইয়ে দেন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তাদের যথাযথ তদারকি না থাকায় ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মো. খোকন নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার, যথাযতভাবে কাজ না করে লোকদেখানো দু-একটি কাজ করে সেই কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেছেন। এ বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ও শ্রমিকদের পাওয়া যায়নি। ডাকঘরে কর্মরতরা জানান কাজ শুরুর এক সপ্তাহ পরে ঠিকাদার ও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে চলে যান। ছাদের উপর পুরোনো জল ছাদ ভেঙে নতুন জল ছাদ ঢালাই দেওয়ার কথা। কিন্তুপুরোনো জল ছাদ না ভেঙে তার ওপর বালু আর সিমেন্টের বড়জোর ইঞ্চি দেড়েক পরিমাণের পাতলা যে আস্তরণ দেওয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে খসে ওঠছে। দেয়াল, মেঝে ও ভেতরের ছাদে হালকা সিমেন্ট বালুর প্রলেপ দেয়া হয়েছে সেগুলোও খসে পড়ার উপক্রম। ছাদের কার্ণিশসহ বেশ কিছু জায়গা এখনও ভাঙা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা নির্মাণ সামগ্রী। কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই এখনও ভবনের ভিতরে পানি চুবিয়ে পড়ে। অনেকটাই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের মধ্যে বসে কাজ করছেন ডাকঘরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এদিকে নিম্নমানের পণ্য ও কাজ সম্পূর্ণ না করে সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ঠিকাদার টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার দেশের ডাকঘরগুলোর সংস্কারের জন্য যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে কুলাউড়া উপজেলা ডাকঘরের সংস্কার কাজ সেই প্রকল্পেরই একটা অংশ। এই প্রকল্পের দায়িত্বরত প্রকৌশলী কাজ কিভাবে হচ্ছে ও কতটুকু হয়েছে এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা!
কুলাউড়া ডাকঘরের সংস্কার কাজের টাকা লুটের চেষ্টা

উপজেলা পোস্ট মাস্টার স্বপন কুমার দে শারিরিক অসুস্থতার জন্য দুই মাস থেকে ছুটিতে আছেন। তাঁর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত (পোস্টাল অপারেটর) প্রণতী রাণী দে বলেন, ডাকঘরের সংস্কার কাজ আপাতত বন্ধ আছে। কিন্তু কেন বন্ধ আছে এবং কাজ সম্পন্ন হবে কিনা সেটা জানিনা। এ ব্যাপারে কার কাছে জানা যাবে সেটিও তিনি বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী মো: খোকন মোবাইলে বলেন, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, আপনারা এই সামান্য টাকার প্রকল্পের পিছনে লাগছেন কেন। নি¤œমাণের পণ্য ও কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, পোস্ট অফিসের কাজ করতে হলে পাপ (দুর্নীতি) করতে হয়। কাজ সম্পূর্ণের বিষয়ে বলেন, এই প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে পুরো সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করা অসম্ভব। আমার ভুল হয়েছে সিলেটে কাজ রাখা। কুমিল্লা থেকে কুলাউড়ায় কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। কোন দরপত্র ছাড়াই তার প্রতিষ্ঠান কিভাবে এই কাজের দায়িত্ব পেলো জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটি কেটে দেন।
সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম সার্কেল) জহিরুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কাজ তদারকি বা পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কাজ তদারকি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য সিলেট বিভাগীয় ডেপুটি জেনারেল পোস্ট মাস্টারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার দরপত্র ছাড়া আমিন এন্ড ব্রাদার্স কিভাবে কাজ পেলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রিকায় ‘সম্ভবত’ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় ডেপুটি জেনারেল পোস্ট মাস্টার মোহাম্মদ ইউছুফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সংস্কার কাজ এখনও চলমান। কাজ তদারকির জন্য দায়িত্বরত পোস্টমাস্টারসহ একটি কমিটি রয়েছে। কাজ শেষ হলে তাদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী পেমেন্ট অর্ডার পাস করা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post