জসিম চৌধুরী/একেএম জাবেরঃ শুরু হয়েছে মধু মাস চারদিকে রসালো ফলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা সবাই, সেই সাথে জমে উঠেছে ব্রাম্মনবাজারের মৌসুমী ফলের হাট। কাল বৈশাখীর সম্ভাবনা আর কাঠফাটা রৌদ্দুরের মাঝে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, গোলাপ জামসহ বিভিন্ন ফলের সমারহে আকৃষ্ট হয়ে উঠছে ক্রেতারা। সিলেট অঞ্চলের রেওয়াজ অনুসারে তাই এতদঞ্চলেও লেগেছে জ্যৈষ্ঠ হাঁড়ির ধুম। এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চলছে এখন ফলের উৎসব। আÍীয় স্বজন কিংবা অতিথীদের বরণ করা হচ্ছে ফল খাওয়ানোর মাধ্যমে। মেয়ের শশুরালয়ে এ সকল পাকা ফল গাড়ি বোঝাই করে পাঠানো ও তাদের বাড়িতে ফল খাওয়ানোর ধুম লাগে এ সময়টাতে। নতুন মেয়ের জামাই বাড়ি হলে তো এর গুরুত্ব দ্বিগুন। সব জাতের ফসল সহ মুড়ি, মুড়কি, খৈ, পিঠা পুলি তো সাথে থাকছেই অধিক গুরুত্বের আজ্ঞাবহ হয়ে। নতুন কুটুমরা মৌসুমী ফলের এ উপঢৌকন তাদের আÍীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে ভাগও করে নেন সমান আগ্রহ আর উচ্ছ্বাসে। নব বিবাহিত কন্যার বাড়ি থেকে শশুড়বাড়িতে (আম কাঠালী) জৈষ্ঠ হাড়ি দেওয়ার জন্য জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লেগেই আছে ব্রাম্মনবাজারে। রাস্তার দু’পাশে বিশাল বিশাল স্তুপ করে রাখা কাঁচা, পাকা, আধপাকা, দেশীয় ফল কাঁঠাল, লিচু, আনারস, আম, জাম, জামরুল, কলা, তাল, লটকন, আমলকিসহ হরেক রকম ফলের সমাহার হলেও দামটা যেন আকাশ ছোঁয়া। মৌসুমী ফলের প্রাণকেন্দ্র ব্রাম্মনবাজার ঘুরে দেখা যায়, চাষীরা ব্যবসায়ীদের কাছে ছোট বড় আকারের প্রতি’শ আনারস ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, কাঁঠাল প্রতি’শ ৪,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা, লিচু ২০০টাকা থেকে ৪০০টাকা এবং আম ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বিক্রি করছে। আর মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে এসব ফল শহরে নিয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে। যা অনেক সময় মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তদের পক্ষে ক্রয় করে খাওয়া অসম্ভব।
প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহ¯পতি বার সকাল হতে রাত পযন্ত মৌসুমী ফসলের সিলেট বিভাগের অন্যতম বৃহত্তর হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও দুর দুরান্তের পাইকারী ব্যাবসায়ী ট্রাক পিকআপ গাড়ি নিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য বাজারে গাড়ীর লাইন জমে থাকে। একসময় বাজারে এসব মৌসুমী ফল ক্রয় করে নেওয়ার জন্য হাকালুকি হাওর দিয়ে পানি পথে ভাটি অঞ্চলের পাইকাররা আসতো কিন্তু কালের পরিবর্তনে আজ এসব নদ নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌকা, লঞ্চ ও ছোট ছোট স্টিমার আর পানিপথে আসতে পারেনা, যার কারনে সড়কপথে এখন এই মৌসুমী ফল পাইকাররা বহন করে থাকেন আর এ কারণে বাজারে গাড়ির যানযট দীর্ঘ হয়ে দাড়িয়েছে নিয়মিত। মৌসুমী ফলের বিশাল হাঠকে কেন্দ্র করে আশে পাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী চা পানের দোকান, একদল শ্রমিক কাঁঠাল, আনারস, গাড়িতে ওঠা নামানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন বাজারের শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত। তাদের আয় রোজগারও ভালো। এসময় ফসলের হাটকে ঘিরে অনেক বেকারদের কর্মসংস্থান হয়।