সিম পুনর্নিবন্ধন না করলে কি হবে?

সিম পুনর্নিবন্ধন না করলে কি হবে?
অনলাইন ডেস্কঃ সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম কার্ডের পুনর্নিবন্ধনের বাকি মাত্র আর একদিন। ৩১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত সিম পুনর্নিবন্ধন করা যাবে। সিম পুনর্নিবন্ধনের জন্য তাই এখন চলছে তোড়জোড়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুনর্নিবন্ধন না করা সিমগুলো আগামী ১ জুন থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে সিমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, পরবর্তী ১৫ মাসের জন্য সেগুলোর বিক্রি স্থগিত থাকবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব সিম দুই মাস পর ব্যবহারকারীরা বিটিআরসির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী কিনতে পারবেন।
এখন রাজধানীসহ দেশজুড়ে সিম নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত গ্রাহকসেবা কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন অপারেটরের মনোনীত প্রতিনিধিদের কাছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা যাচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জন্য সময় কম থাকায় গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত গ্রাহকসেবা কেন্দ্র ও প্রতিনিধিদের কাছে ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাহকদের কিছু ভিড় থাকলেও তাঁরা আগ্রহ নিয়ে সিম নিবন্ধন করছেন।
এদিকে মোবাইল অপারেটরগুলো এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক সিম নিবন্ধন করতে বিশেষ চেষ্টা চালাচ্ছে। বায়োমেট্রিকে সিম নিবন্ধন করা কয়েকজন গ্রাহকের ভাষ্য, এলাকায় বিভিন্ন মোড়ে, জনসমাগম স্থলে ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিদের কাছেও সিম নিবন্ধন করা যাচ্ছে। সিম নিবন্ধনে টাকা লাগছে কি না জানতে চাইলে এক গ্রাহক বলেন, ‘টাকা চাইছে না। তবে কেউ কিছু দিলে তারা খুশি।’
গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ ও আগামীকাল রাত ৮ পর্যন্ত তাদের নিজস্ব সেবাকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।
মোবাইল অপারেটর এয়ারটেল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, যে গ্রাহকেরা এখনো নিবন্ধন করেননি, তাঁদের নিবন্ধন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাড়তি সময় পরিশ্রম করে, গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা চালানো হবে। পুরো টিম এতে কাজ করছে।
সিম নিবন্ধনে যা লাগছেঃ
১. মোবাইল সিম কার্ড
২. ন্যাশনাল আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
৩. এক কপি ছবি
৪. শনাক্তকারীর মোবাইল নম্বর, ভোটার আইডি নম্বর
১ জুন বন্ধ হয়ে যাবে সিমঃ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব সিম নিবন্ধন করা হবে না সেগুলো আগামী ১ জুন থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে সিমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, পরবর্তী ১৫ মাসের জন্য সেগুলোর বিক্রি স্থগিত থাকবে।
সরকারের হিসাবে আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) পদ্ধতিতে চলমান সিম নিবন্ধন কার্যক্রমে গত শনিবার পর্যন্ত পুনর্নিবন্ধিত হয়েছে ১০ কোটি ৯ লাখ সিম। নিবন্ধিত এই সিমের সংখ্যা বর্তমানে চালু থাকা মোট ১৩ কোটি ১৯ লাখ সিমের ৭৬ শতাংশ।
তারানা হালিম বলেছেন, ‘আমরা যখন এ প্রক্রিয়া শুরু করি, তখনই জানতাম কিছু সিম বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যত সিম নিবন্ধিত হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বাড়ছে, নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল বা এমএনপি সুবিধা চালু হবে ও ফোরজি তরঙ্গের নিলাম হবে—এভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’
গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিম বন্ধের একটি নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। এ ছাড়া কম্পিউটারে ও ট্যাবে মডেমের মাধ্যমে যেসব ইন্টারনেট সিম ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিবন্ধনের বিষয়ে গ্রাহকের সঙ্গে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ডেটা সিমের একটি বড় অংশ এ কারণে বন্ধ হয়ে গেলে এ খাতের আয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমগুলোর কী হবে?
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১ মের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করতে কারিগরি জটিলতার কারণে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব দুই মাস পর ব্যবহারকারীরা বিটিআরসির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী কিনতে পারবেন।
তবে গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, সিম বন্ধ হয়ে গেলে পরের দিন থেকেই গ্রাহক সিম তুলতে পারবেন। এ জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হবে আর বায়োমেট্রিক অবশ্যই করতে হবে। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার কোটির বেশি সিম নিবন্ধন হয়েছে গ্রামীণফোনের। আগামীকালের মধ্যে সব সিম নিবন্ধন করে ফেলতে যে সেবা প্রয়োজন, তা দিতে তারা প্রস্তুত।
এয়ারটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, যাঁরা সক্রিয় গ্রাহক তাঁদের অধিকাংশই নিবন্ধন করে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ ৪০ হাজার পুরোনো ও ৮ লাখ ৬৬ হাজার নতুন গ্রাহক এ পদ্ধতিতে নিবন্ধন করেছেন। যাঁদের সিম বন্ধ হয়ে যাবে তাঁদের নিয়ে কী করা হবে এখনো সে বিষয়ে নির্দেশনা ঠিক করা হয়নি।
এদিকে, জুনের শেষে অথবা জুলাইয়ের শুরুতে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত হয়েছে, সেটি গ্রাহকদের জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তারানা হালিম। তিনি বলেন, খুদে বার্তার মাধ্যমে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে। কোনো গ্রাহক যদি নিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দিতে চান, সেই সুযোগও থাকবে।
সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ না মেলাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে এনআইডির ১৬১০৩ নম্বরে ফোন দিলে সমাধান পাওয়া যাবে।
মেয়াদ কী আর বাড়বে?
প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, জনগণের স্বার্থে সিম নিবন্ধনের সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হয়েছিল। ৩১ মের পর সিম নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। এর আগে ৩০ এপ্রিল সিম নিবন্ধনের সর্বশেষ মেয়াদ ছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post