নারী সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার, আবারও বিতর্কে গেইল

নারী সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার, আবারও বিতর্কে গেইল
অনলাইন ডেস্ক: ক্রিস গেইলের নাম বললে কোন জিনিসটা সবার আগে মনে আসে? ছক্কা আর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের কথা আসবে, ৩৩৩ সংখ্যাটাও কল্পনায় আসতে পারে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনারের নামের সঙ্গে আরেকটি বিষয় না চাইতেই হাজির হয়ে যায় বিতর্ক।

বিগ ব্যাশে খেলতে গিয়ে গত জানুয়ারিতে টিভি ক্যামেরার সামনে অস্ট্রেলিয়ান নারী সাংবাদিককে অভিসারের প্রস্তাব দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। সেটির রেশ মনে হচ্ছিল আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে, কিন্তু গেইল সেটি আর হতে দিলেন কই! অনেকটা আগের ‘ফর্মুলা’ মেনেই ছড়ালেন নতুন বিতর্ক। আরও একটি সাক্ষাৎকার, আরেকবার নারী সাংবাদিক, আবারও গেইলকে ঘিরে উঠল যৌন বৈষম্যের অভিযোগ।

দ্য টাইমসের নারী সাংবাদিক শার্লট এডওয়ার্ডস সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে এসে গেইলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আজ প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে যৌনতা ও নারীদের অধিকার বিষয়ে গেইলের কিছু দ্ব্যর্থবোধক মন্তব্যই যত সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

সাক্ষাৎকার চলার সময়েই এডওয়ার্ডসকে কিছুটা ভিন্ন ইঙ্গিত করে গেইল নাকি দাবি করেছেন, তাঁর ব্যাট ‘অনেক, অনেক, অনেক বড়। আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বড়।’ সঙ্গে এ-ও যোগ করেছেন, ‘তোমার মনে হয় তুমি এটা তুলতে পারবে? তাহলে দুই হাতই ব্যবহার করতে হবে তোমাকে।’

৩৬ বছর বয়সী ক্যারিবীয় ওপেনার নিজেকে ‘অনেক বেশি সুদর্শন’ দাবি করে বলেছেন, তাঁকে সঙ্গ দিতে ‘হাজার হাজার মেয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি।’ এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক পাল্টা ‘তুমি কাউকে সঙ্গ দিতে চাও?’
প্রশ্ন করাতে গেইল বলে বসলেন, ‘তোমার প্রশ্নগুলো কেমন যেন।’ নিজেই আবার এডওয়ার্ডসকে প্রশ্ন করেছেন, ব্রিটিশ এই নারী ‘কখনো কোনো কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন কি না? কখনো একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে এমন সম্পর্কে জড়িয়েছেন কি না?’

সাক্ষাৎকারের একটা পর্যায়ে নারী অধিকার ও সমতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় গেইলকে। জ্যামাইকান বাঁহাতি ওপেনার এর উত্তরটা দিয়েছেন এভাবে, ‘নারীদের সম-অধিকার থাকা উচিত এবং তাঁরা সেটি পাচ্ছেনও। নারীরা যা ইচ্ছা তা-ই করার সুযোগ পাচ্ছেন। জ্যামাইকান মেয়েরা তো তাঁদের অধিকার নিয়ে বেশ সরব।’ কিন্তু একটু পরই বললেন, ‘মেয়েদের আসলে উচিত পুরুষদের সন্তুষ্ট রাখা। যখন একজন পুরুষ ঘরে আসবেন, খাবার যেন টেবিলেই থাকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের উচিত তাঁদের স্বামীকে জিজ্ঞেস করা, তাঁরা কী পছন্দ করেন, এবং সে অনুযায়ীই রান্না করা উচিত।’

সম অধিকার প্রসঙ্গেই এডওয়ার্ডস জিজ্ঞেস করেছিলেন ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা। কদিন আগেই গেইলের বান্ধবী নাতাশা বেরিজের কোলে এসেছে কন্যাসন্তান। সন্তানের দেখাশোনা, বান্ধবীর সঙ্গে ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়গুলোতে গেইল বললেন, ‘কোলে বাচ্চা নিয়ে ওর রান্না করার কোনো দরকার নেই। আমরা বাইরে থেকেই খাওয়ার কিনে নিতে পারি। যদি ও কাজে থাকে, তখন আমরা দুজন মিলে ভাগাভাগি করে নিই। যে আগে বাসায় ফেরে, সেই রান্না করে।’ কিন্তু ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ায় নিজের ‘সীমানা’ও জানিয়ে দিলেন। বাচ্চার ডায়াপার তিনি বদলাতে রাজি, তবে রান্না? ‘না’। আর থালাবাসন পরিষ্কার করা? ‘প্রশ্নই ওঠে না!’

গত জানুয়ারিতে মেল ম্যাকলাফলিনের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকার-কান্ডের পর বিগ ব্যাশে তাঁর দল মেলবোর্ন রেনেগেডস ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করে গেইলকে। সঙ্গে ম্যাকলাফলিনের কাছে পরে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে গেইলকে। এবারের সাক্ষাৎকারটিও এল এমন এক সময়ে, আর কদিন পরই সমারসেটের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন গেইল। ক্লাবটির প্রধান নির্বাহী গাই ল্যাভেন্ডার জানুয়ারিতে গেইলের মন্তব্যগুলোকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে ‘অনুপযোগী’ বলেছিলেন। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের এবারের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি ল্যাভেন্ডার। আরেক ইংলিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, সাক্ষাৎকারটি তিনি পড়েননি। তবে জানিয়েছেন, ‘সমারসেটের হয়ে গত বছর তিনটি ম্যাচ খেলার সময়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে গেইলের আচরণ চমৎকার ছিল।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।

Post a Comment

Previous Post Next Post