ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ: চলতি বছর কানাডায় অভিবাসনের
সুযোগ পাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। যোগ্যতা ও
দক্ষতার ভিত্তিতে আবেদন করা যাবে এক্সপ্রেস এন্ট্রি, প্রভিনশিয়াল নমিনি
প্রোগ্রাম, সেলফ অ্যামপ্লয়েড, ফ্যামিলি স্পন্সরশিপসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে।
২০১৬ সালে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হবে। কানাডা
সরকারের চলতি বছরের অভিবাসন পরিকল্পনায় জানানো হয়েছে, কানাডার অর্থনীতিতে
অবদান রাখতে পারবে—এমন লোক নেওয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার ৬০০ জন। ৮০ হাজার
পরিবার, শরণার্থী হিসেবে ৫৫ হাজার ৮০০ জন এবং মানবিক সহায়তায় দেশটিতে
যাওয়ার সুযোগ পাবে তিন হাজার ৬০০ জন। কানাডায় যেতে আগ্রহীদের জন্য
এক্সপ্রেস এন্ট্রি, প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম, সেলফ অ্যামপ্লয়েড,
ফ্যামিলি স্পন্সরশিপসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে
আবেদনের যোগ্যতা ভিন্ন। তবে সব ক্যাটাগরিতে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের সুযোগ
দেওয়া হবে।
এক্সপ্রেস
এন্ট্রি: কানাডায় অভিবাসন আবেদন করার নতুন ক্যাটাগরি এক্সপ্রেস এন্ট্রি।
এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজে অভিজ্ঞরা কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ পাবেন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রির তিনটি প্রোগ্রাম আছে। এগুলো হলো—ফেডারেল স্কিলড
ওয়ার্কার, ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার্স ও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এন্ট্রি।
তিনটি প্রোগ্রামেই আবেদনকারীদের বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৫৩ বছরের মধ্যে।
আইএলটিএস স্কোর থাকতে হবে কমপক্ষে ৫। আইইএলটিএস স্কোর ভালো হলে এবং বয়স ৩০
বছরের মধ্যে হলে সব প্রদেশেই আবেদনের সুযোগ পাওয়া যাবে। ফেডারেল স্কিলড
ওয়ার্কার প্রোগ্রামে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা বা স্নাতক।
লাগবে নির্দিষ্ট পেশায় কমপক্ষে এক বছরের অভিজ্ঞতা। আবেদনকারীদের যোগ্যতা
নির্ণয় করা হবে ছয়টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি বিষয়ে নির্দিষ্ট
পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। মোট ১০০ পয়েন্ট। এর মধ্যে শিক্ষা বিষয়ে ২৫, ভাষা
দক্ষতায় ২৮, কাজের অভিজ্ঞতা ১৫, বয়সে ১২, কাজ নিশ্চিত করা ১০ এবং কানাডায়
নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে বরাদ্দ থাকবে ১০ পয়েন্ট। কোনো আবেদনকারী
কমপক্ষে ৬৭ পেলে আবেদন করতে পারবেন।
ফেডারেল
স্কিলড ট্রেডার্স প্রোগ্রামে একটি নির্দিষ্ট ট্রেডে দক্ষ ব্যক্তিরা আবেদন
করতে পারবেন। কানাডা সরকারের ইমিগ্রেশনবিষয়ক ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,
আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা না
থাকলে পয়েন্ট পাওয়া যাবে না। থাকতে হবে নির্দিষ্ট ট্রেড সার্টিফিকেট এবং
কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। গত তিন বছরের মধ্যে কানাডায় কমপক্ষে এক
বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আছে—এমন সব ব্যক্তি কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স
ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন। কানাডিয়ান ন্যাশনাল অকোপেশনাল ক্লাসিফিকেশন
(এনওসি) অনুযায়ী কাজের অভিজ্ঞতার পয়েন্ট হিসাব করা হবে।
প্রভিনশিয়াল
নমিনি প্রোগ্রাম: পেপার বেইজড অথবা এক্সপ্রেস এন্ট্রি এই দুই পদ্ধতিতে
প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে। কানাডার ১১টি প্রদেশে
যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে পেপার বেইজড আবেদন করা যাবে। বিভিন্ন প্রদেশের
ওয়েবসাইটে যোগ্যতা ও কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানা যাবে। আগ্রহীরা এক্সপ্রেস
এন্ট্রির মাধ্যমেও প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন।
সেলফ
অ্যামপ্লয়েড: কানাডায় স্বনির্ভরভাবে কাজ করতে আগ্রহীরা এই প্রোগ্রামে
আবেদন করতে পারবেন। প্রার্থী নির্বাচন করা হবে শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, বয়স,
ভাষাগত দক্ষতা ও মানিয়ে নেওয়া এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনা করে।
আবেদন
ও বাছাই প্রক্রিয়া: আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী ড. শেখ সালাহউদ্দিন
আহমেদ জানান, কানাডায় যেতে আবেদনের জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ,
আইইএলটিএসের কাগজপত্র, অভিজ্ঞতার সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, পাসপোর্টের তথ্য ও
একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত লাগবে। পয়েন্ট হিসাব করা হয় সব কাগজপত্র
বিবেচনায় এনে। আবেদনের সময় কানাডা সরকারের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হয়।
ধরনভেদে আবেদন ফি ভিন্ন।
অগ্রাধিকার
পাবেন যাঁরা: অ্যাকাউনট্যান্ট, অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচআর, সেলস অ্যান্ড
মার্কেটিং, ফিন্যানশিয়াল অডিটর অ্যান্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, রিটেইল সেলস
সুপারভাইজার, ফুড সার্ভিস সুপারভাইজার, কুক, ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যানালাইসিস
অ্যান্ড কনসালটেন্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার প্রোগ্রামার,
ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া ডেভেলপার, গ্রাফিকস ডিজাইনার, আইটি প্রফেশনাল,
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল
রিপ্রেজেন্টেটিভ ও ব্যাংকার পেশাজীবীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
আয়-রোজগার:
কানাডায় আয়ের হিসাব করা হয় প্রতি ঘণ্টা হিসেবে। কাজভেদে প্রতি ঘণ্টায় ১৬
থেকে ২২ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। যে পরিমাণ কাজ করবে, সে অনুযায়ী আয় করা
যাবে।
সুযোগ
আছে উদ্যোক্তা হিসেবেও: ইমিগ্রেন্ট ইনভেস্টর প্রোগ্রামের আওতায় কুইবেক
প্রদেশে যেতে পারবেন উদ্যোক্তারা। এ জন্য আবেদনকারীর ১.৬ মিলিয়ন কানাডিয়ান
ডলারের সমান সম্পদ থাকতে হবে। পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে ৪ লাখ
কানাডিয়ান ডলার। এ প্রোগ্রামে আবেদন চলবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
কুইবেক এন্টারপ্রেনার প্রোগ্রাম ক্যাটাগরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে তিন লাখ
কানাডিয়ান ডলার ও ব্যবস্থাপক হিসেবে এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কুইবেক
সেলফ অ্যামপ্লয়েড পারসন প্রোগ্রামে আবেদন করতে কমপক্ষে এক লাখ কানাডিয়ান
ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। এসব ক্যাটাগরিতে বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও
আইএলটিএস স্কোরের বাধ্যবাধকতা নেই।
দরকারি
ওয়েবসাইট: কোন ক্যাটাগরিতে কতজন নেওয়া হবে তা জানা যাবে
news.gc.ca/web/article-en.do?nid=1038699 লিংকে। অভিবাসনের বিভিন্ন
ক্যাটাগরিতে আবেদনের যোগ্যতা ও অন্যান্য তথ্য পাবেন
www.cic.gc.ca/english/immigrate লিংকে।
www.immigration-quebec.gouv.qc.ca/en ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কুইবেক প্রদেশে
অভিবাসনের তথ্য পাওয়া যাবে। অভিবাসন সম্পর্কে আরো তথ্য জানা যাবে
www.immigration.ca/en ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। কানাডার ভিসা সম্পর্কে
www.canadavisa.com ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশি আবেদনকারীদের
আবেদনের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে www.wwbmc.com ওয়েবসাইটে।
৩০
বছরের কম বয়সীরা বেশি সুযোগ পায়। দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও
যাদের ৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের প্রাধান্য বেশি। কাজের অভিজ্ঞতা ও
শিক্ষাগত যোগ্যতার সামঞ্জস্য থাকতে হবে। আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ থেকে ৭-এর
মধ্যে রাখতে হবে। ঝুঁকি কম থাকায় উদ্যোক্তাদের জন্যও কানাডায় বিনিয়োগ
লাভজনক। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগেভাগেই আবেদন করতে হবে। প্রার্থী
চাইলে নিজেও আবেদন করতে পারেন। তবে আবেদনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে
হবে।
ভুয়া
বা ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। একবার আবেদনপত্র বাতিল হলে পরে
আবেদন করা গেলেও সম্ভাবনা কমে যায়। এ জন্য দক্ষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে আবেদন করাই ভালো।
লেখক: আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী
চেয়ারম্যান, ওয়ার্ল্ডওয়াইড মাইগ্রেশন কনসালটেন্টস