নিজস্ব প্রতিবেদক: বিয়ানীবাজার উপজেলার এক পলাতক সৈনিকের খোঁজে তার বাড়িতে গভীর রাতে বিয়ানীবাজার থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সৈনিককে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মাকে হয়রানি ও মানষিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রাম গ্রামের মৃত মোঃ আলা উদ্দিনের একমাত্র পুত্র মোঃ হাসান আহমদ ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর সিগন্যালস্ কোরে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৬ বছর চাকুরি করার পর বিভিন্ন অভিযোগে তিনি আজ পলাতক। সেনাবাহিনী নীতিমালাকে লঙন করে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততার পাশাপাশি ২০১২ সালের বি ডি আর বিদ্রোহের মতো মর্মান্তিক গঠনার আসামীকে আশ্রয় ও সহযোগীতার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হাসান সেনাবাহিনীর কোন বড় বিচারের সম্মুখিন হবার ভয়ে ২০১২ সালে ডিসেম্বর মাসে চাকুরী ছেড়ে পালিয়ে যান। সেই সময় তিনি যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত পলাতক মোঃ হাসান আহমদের খোঁজে নিয়মিত তার বাড়িতে সেনাবাহিনীও পুলিশের লোকজন অভিযান চালিয়ে আসছে। একজন পলাতক সৈনিকের খোঁজে এভাবে দফায় দফায় পুলিশি অভিযানে চরম ভাবে আতংকিত হাসানের পরিবার থেকে বারবার হাসান কোথায় আছেন জানেননা বলা হলেও থেমে নেই পুলিশের এই মানষিক নির্যাতন। গত শুক্রবার গভীর রাতে একই ভাবে হাসানের খোঁজে তার গ্রামের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পুরুষশুন্য এই বাড়িটিতে হাসানের মা ও অসহায় দুই বোন অবস্থান করছেন। হাসানকে না পেয়ে বিভিন্ন ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার অবস্থানের তথ্য জানার চেষ্টা করে পুলিশ। একপর্যায়ে কোন তথ্য না পেয়ে হাসানের বৃদ্ধ মা সজনা বেগমেকে বিয়ানীবাজার থানায় নিয়ে যায় তারা। জিজ্ঞাসাবাদের নামে সারারাত থানায় বসিয়ে রেখে সকালে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। গভীর রাতে একজন বৃদ্ধ বিধবা মহিলাকে থানায় নিয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ লুৎফুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন ‘হাসান কি অপরাধে পলাতক আমরা জানিনা, তবে পুত্র যতবড় অপরাধীই হোক তার অপরাধে একজন মাকে এভাবে থানায় নিয়ে অপমান ও হয়রানি করা দুঃখজনক।’ সজনা বেগমের অভিযোগ প্রতি মাসে দুই তিনবার হাসানের খোঁজে তার বাড়িতে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোক আসেন। শুক্রবার রাতের মতো এতো খারাপ আচরণ আর কখনো করা হয়নি। তিনি বলেন ‘আমার ছেলে ২০১২ সালে তার প্রাণের ভয়ে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে পলাতক রয়েছে অথচ ২০১৩ সালের একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামী করার কারণে পুলিশ তাকে পাগলের মতো খোঁজছে। সেনাবাহিনী থেকে পলাতক একজন মানুষ কিভাবে হত্যা মামলার আসামী হয় আপনারা ভেবে দেখুন।আমার স্বামী জাসদের রাজনীতি করার কারণে সারা জীবন যে মানুষগুলো তার সাথে শত্রুতা করে বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছিলো সেই মানুষগুলোই আমার ছেলেকেও রাজনৈতিক কারণেই ধ্বংস করে দেবার ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছে।’ তিনি কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন ‘আমার ছেলেটি পালিয়ে যাওয়ার ৪ মাস পর তার একটি মেয়ে জন্ম হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত সে তার মেয়েটিকে দেখতে পারেনি, পুলিশের লোক কেন যে আমাদেরকে বিশ্বাস না করে এভাবে হয়রানি করছে জানিনা।’ বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবের আহমদ বলেন কাউকে কোন হয়রানি বা নির্যাতন করা হয়নি। হত্যা মামলার মতো মারাত্মক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও সেনাবাহিনী থেকে পলাতক সৈনিক মোঃ হাসান আহমদকে গ্রেফতারের জন্য আমাদের উপর প্রচন্ড চাপ রয়েছে। গত শুক্রবারে সে তার বাড়িতে অবস্থান করছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমাদের কিছু সদস্য সেখানে যায় এবং তার মায়ের কথার মধ্যে কিছু অসামঞ্জস্য লক্ষ করায় হাসানের প্রকৃত অবস্থান জানতে থাকে থানায় নিয়ে এসে যথাযোগ্য সম্মানের মাধ্যমে জিজ্ঞসাবাদ করা হয়। একজন বৃদ্ধাকে এভাবে হয়রানির প্রতিবাদ করে উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শমসের আলম বলেন ‘হাসানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী থেকে কি অভিযোগ আছে আমরা জানিনা তবে স্থানীয় ভাবে জাসদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে জাসদের অন্যান্য নেতাদের মতো বারবার সেও মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছে। ২০০৭ সালে বিয়ানী বাজার উপজেলা জাসদের সহ সাংঘঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মূলত তার জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকাময় যন্ত্রণা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে কেবল রাজনৈতিক মত বিরোধের কারণে একজন মানুষের জীবনকে এভাবে বিষিয়ে তুলা দুঃখজনক। আর যদি হাসান অপরাধী হয়ও কোন ভাবেই তার মাকে এভাবে গভীর রাতে থানায় নিয়ে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না।’