“হায়রে কষ্ট গেল কই”!

“হায়রে কষ্ট গেল কই”!
নাজমুল ইসলাম: এ বছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে আসা শীলাবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে চোখের সামইে ১৬০ হেক্টর জমির তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন হাওরপারের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। লাগাতার ঝড়, শীলাবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মুক্ত জলাশয় হাকালুকি হাওরের বোরো ধানের। কয়েকদিন আগে যেখানে বোরো ধানের ফসলে বিস্তৃত সবুজে সমারেহ ছিল সেখানে এখন চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। ঝড়বৃষ্টি ও শীলাতে হাওর তীরের পাকা, আধা-পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সরেজমিন গত ২৮ এপ্রিল হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশীমইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,স্থানীয় কৃষকেরা পানিতে তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কেউবা কমরপানি, কেউবা বুকপানি থেকে ধান কাটছেন, কেউবা নৌকায় ধান তুলছেন আবার কেউবা নৌকা করে ধান নিয়ে ডাঙ্গায় তুলছেন। আর ডাঙ্গায় কৃষনীরা ধান মাড়াইয়ে মহাব্যস্ত।
হাওরের কানেহাত এলাকার কৃষক রহমত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পানিয়ে সব ধান নিছেগি,আওড়র বরোয়া ধান আমরার জীবিকা, অতদিনতনে নিজের বউত টেকা খরছিয়া বরোয়া ধানর লাগি কষ্ট করলাম আর কয়দিন তাকি মেঘ (বৃষ্টি) দিয়া আওড়র সব পাখনা আধাপাখনা ধান ভাসাইলাইছে” বলে কান্নাকন্ঠে বলেন “হায়রে কষ্ট গেল কই”। কৃষক রহমত আলী তখন তার ৬ বছরের পুত্র রাফিকে নিয়ে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কানেহাত এলাকার বিল থেকে নৌকা দিয়ে সংগ্রহ করছিলেন পানিতে তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা বোরোধান।
সরেজমিনে হাওরের এমনি দৃশ্য দেখা যায়। অনেক জমিতে কলার ভেলা দিয়ে ২-৩ ফুট পানির মধ্যে ধান কাটতে দেখা গেছে। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেতের কাচা ধান পানিতে প্রায়য় ২-৩ ফুট তলিয়ে রয়েছে। জানা যায়, এ বছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে আসা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চোখের সামইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়। সারাদিন হাকালুকি হাওরে ধান কাটছে কৃষকের হতাশা সময়। কদিন পরই যে ধান কেটে ঘরে তুলার স্বপ্ন নিয়ে ব্যবস্থ হয়ে ছিল উপজেলার কৃষক তা গত এক সপ্তাহের বৃষ্টি তে অনেকটা ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। উপজেলার ভূকশীমইল ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের কৃষক ময়না মিয়া জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে আর বাজারে ধানের দাম কম থাকায় বাহিরের কোন শ্রমিক ধান কাটতে আসতে চাইছে না। তাই বড় বিপাকে আছি।
এদিকে এশিয়ার বৃহৎ হাকালুকি হাওর এলাকার কৃষক রমুজ মিয়া, আবিদ মিয়া, মন্তর আলী, পাকি মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক বলেন,এবার গতবারের চেয়ে বৃহৎ হাকালুকি হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষয়তি হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন ওই কৃষকরা কিভাবে পোষাবেন এ চিন্তায় এখন মাথায় হাত তাদের। তবুও থেমে নেই কৃষকরা, শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যতটুকু সম্ভব ধান সংগ্রহ করার আশায়। নবাবগঞ্জ বাজারের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, এবছর হাওরে তিনি ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। যার এক কাঁচিও ধান কাটতে পারেননি। সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে উনার লক্ষাধিক টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এম শহনেয়াজ ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার বোরো চাষিদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post