তনু হত্যাকাণ্ড; ২৮ দিনেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের খবর নেই

 তনু হত্যাকাণ্ড; ২৮ দিনেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের খবর নেই
নিউজ ডেস্কঃ কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হওয়ার পর ২৮ দিন পেরিয়ে গেছে। চট্টগ্রামের ফরেনসিক ল্যাব থেকে ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন ও ডিএনএ প্রতিবেদনও চলে এসেছে অনেক আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। কবে নাগাদ দেওয়া হবে, সেটাও নিশ্চিত করে বলছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মাথার জখমসহ বিভিন্ন বিষয় গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর গত ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ওই দিনই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।

কবে নাগাদ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হবে—জানতে চাইলে গতকাল বুধবার অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বলা যাচ্ছে না। শুধু এতটুকু লেখেন, রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

অবশ্য এর আগে গত সোমবার বিকেলে কামদা প্রসাদ সাহা বলেছিলেন, ‘ভিসেরা প্রতিবেদনের বাইরে বিভিন্ন নমুনার প্রতিবেদন এখনো আসেনি। সব রিপোর্ট এলেই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

সিআইডির সূত্র জানায়, সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগেই ভিসেরা ও ডিএনএ পরীক্ষার ফল পাঠানো হয়েছে। এসব পরীক্ষার ফল হাতে পেয়েছেন কি না, সে বিষয়ে গতকাল কিছু বলতে রাজি হননি কামদা প্রসাদ সাহা।

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে যদি ময়নাতদন্তের ফলাফল পেতে একটু দেরিও হয়, সেটা মেনে নিতে রাজি আছি। এটা যদি তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে দুরভিসন্ধির অংশ হয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এর দায়ভার বহন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তনু খুন হয়েছে। এখন রাষ্ট্র ও এর সংস্থাগুলোর দায়িত্ব খুনিকে খুঁজে বের করা। তারা যদি তা না পারে, তবে আত্মসমর্পণ করুক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, তনুর লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ে যা হচ্ছে, নজিরবিহীন। প্রথম দফায় প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই এখন দ্বিতীয় দফার প্রতিবেদনের জন্য তাঁরা অপেক্ষায় আছেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান গতকাল বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড আমাদের এখনো দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়নি। তার পরও তদন্ত থেমে নাই। আমরা প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি।’

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাছির উদ্দীন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘একটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে ২৮ দিন লাগে কি না, সেটা আমার জানা নেই, এই বয়সে শুনিনি। তনু হত্যার ঘটনায় কেন দেরি হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি তদন্ত করে বিচার পর্যন্ত আসা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তোলার পর দ্বিতীয়বার সুরতহাল করা হয়। এতে তনুর মাথার পেছনের অংশ থেঁতলানো ও নাকে জখম ছিল। হাত ও পায়ে কালো চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাথার চুল কাটা। কিন্তু প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জখমের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

প্রথম দফা ময়নাতদন্ত করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানা। তাঁকে সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ময়নাতদন্ত করার সময় তাঁকে কেউ ফোন করেছিল কি না, জানতে চায় সিআইডি। শারমিন সুলতানা দুটি ফোন আসার কথা বলেন। তবে তাঁর কলতালিকার ওই সময় তিনটি কল ছিল বলে সিআইডির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। একটি কলের কথা কেন গোপন করেছেন, সেটা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা। সিআইডি এ পর্যন্ত মোট ৫৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু খুন হন। ওই রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরে একটি ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তনু হত্যার বিচার দাবিতে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে সারা দেশে যখন আন্দোলন গড়ে ওঠে, তখনই সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দেয়, যে অপরাপর ঘটনার মতো এটিও ধামাচাপা দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, সরকার ব্লগারসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তনুর বেলায়ও একই ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে। নতুবা একটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে এত সময় লাগার কথা নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post