নিউজ ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা’র) বাড়ির পাশে বোমা সদৃশ্য বস্তুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিকাল পৌনে ৪টায় সিলেট থেকে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে এসে পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর নিষ্ক্রিয় করে। সোমবার সকালে বাড়ির কাজের লোক এটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানা পুলিশ গত দুই দিনে ৭ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল। নিরাপত্তার মধ্যেও গত এক সাপ্তাহে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে পোষা ভারতী ও ধলাবোড়া নামের দুটি কুকুর দুবৃত্তরা বিষ খাইয়ে হত্যা করে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ১ মার্চ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষ্যে বাড়িতে পারিবারিক ভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাড়িতে অবস্থান করছেন প্রধান বিচারপতির সহধর্মীনি সুষমা সিনহা। রোববার রাতে তিনি বাড়িতে রাত্রি যাপন না করে বাবার বাড়ি কমলগঞ্জের মাধবপুরে রাত্রি যাপন করেন। বাড়িতে ছিলেন প্রধান বিচারপতির কাকি মানে দেবী সিনহা। সোমবার সকাল ৭টার দিকে বাড়ির পিছনে সবজি ক্ষেতে লাল রঙের একটি গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে থাকতে দেখেন বিচারপতির ভাতিজা অশ্বিনী সিংহ। বিষয়টি পরিবারের সদস্য সহ প্রধান বিচারপতির সহধর্মীনিকে জানানো হয়। সংবাদ পেয়ে বাবার বাড়ি থেকে তিনি ছুটে আসেন। খবর পেয়ে সকাল ৮টায় প্রথমে কমলগঞ্জ থানার ওসি এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ও পরে র্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে এলাকাটি ঘিরে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ-জালাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জাহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোল্লা শাহীন, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জের ইউএনও শফিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র জুয়েল আহমদ, আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে পাওয়া রোডম্যাপে লিখা ছিলো ‘অবস্থান, হামলা ও পালানো’ শব্দগুলো ঘিরে দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। ঘটনাস্থলের পাশে দুর্বৃত্তদের রেখে যাওয়া বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের পাশে ছিল নীল কাগজের হাতে আঁকা রোড়ম্যাপ, ওসামাবিন লাদেন স্টাইলের পার্সপোর্ট সাইজের এক যুবকের ছবি ও আলফালাহ যুবসংঘ নামের একটি সংগঠনের ৭ সদস্যের নাম ও মোবাইল ফোনের তালিকা। এতে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। খরর পেয়ে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানটি ঘেরাও করে রাখে। সিলেট থেকে ডেকে আনা হয় পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞ টিম। ঘটনাস্থলে পুলিশ,র্যাব,বিজিবির উর্ধ্বতন র্কমকর্তা,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অবস্থান নেন। খবর পেয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসক জনতা ভীড় করেন প্রধান বিচারপতির বাড়িতে। পরীক্ষা নিরিক্ষার পর বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিশ্চিত করে এটি একটি সাধারণ গ্যাস সিলিন্ডার। অপরদিকে অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, ১১ মার্চ কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে আল ফালাহ যুব সোসাইটির উদ্যোগে এক বিরাট ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। এই ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ওহাবী ও সুন্নী মতাদর্শী দুটি গ্রুপের মধ্যে মতানৈক্য চলছে। কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিনিধিকে জানান, কারা কেন এটি এখানে রেখেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিপজ্জনক কোনো কিছু আমরা পাইনি। সোমবার রাতে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতেই স্থানীয় একজনের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে আরো ২ জনকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে পুলিশ জানায়।