স্টাফ রিপোর্টারঃ কুলাউড়ায় ক্রমেই নৌকা আর ধানের শীষের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে। ৩ জন এমপি ও একজন মেয়র নির্বাচিত হলেন এই দুই প্রতিকের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে। বৃহত্তর সিলেটের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হলো কুলাউড়া। রাজনীতিবিদরা কুলাউড়াকে একটি রাজনীতিক সচেতন এলাকা হিসেবেই জানে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদশের সবক’টি আন্দোলন সংগ্রামে কুলাউড়ার একটা আলাদা ভুমিকা রয়েছে। মহাত্মাগন্ধী, ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে কবিগুরু রবিন্দ্র নাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সর্বশেষ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এর বিশেষ স্মৃতি বিজড়িত এই কুলাউড়া। কুলাউড়ায় নৌকা ও ধানের শীষের প্রতি মানুষের একটা বিরূপ মনোভাব রয়েছে। নৌকার প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়েছে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে। নৌকার বিপক্ষে যতবার একক প্রার্থী ছিলো ততবার হেরেছে নৌকা। হারিকেন প্রতিক নিয়ে মুসলিম লীগের কেন্দ্রিয় সভাপতি অ্যাডভোকেট এএনএম ইউছুফ বিজয়ী হয়েছিলেন। আর ধানের শীষের প্রতিক এখন পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেনি কুলাউড়ায়। বরং জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বেশিরভাগ নির্বাচনে। নৌকা আর ধানের শীষ প্রতিকের প্রতি মানুষের অনাস্থা স্পষ্টত ফুটে উঠে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে। সেবার বিএনপির প্রাথী এমএম শাহীন মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন। সেই নির্বাচনে তৎকালীন প্রভাবশালী এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতে ড. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএম শাহীন। ফুটবল প্রতিক নিয়ে নৌকার চেয়ে ২৩ হাজার বেশি অর্থাৎ ৭৮ হাজার ৯ শতাধিক ভোট পেয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃস্টি করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পেলেন নতুন মুখ অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম। আর ফের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন এমএম শাহীন। ধানের শীষের প্রার্থী হলেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। নৌকা আর ধানের শীষের দুই প্রার্থী জামানত হারালেন। আর স্বতন্দ্র প্রার্থী এমএম শাহীন ৬৮ হাজারের বেশি ভোট পান এবং লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মুহিবুল কাদের চৌধুরী পিন্টুকে লাঙ্গল প্রতিকের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিন আনারস প্রতিকে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। আর নৌকা আর ধানের শীষ প্রতিকের শেষ নির্বাচন অর্থাৎ পৌর নির্বাচনে কুলাউড়ায় নারকেল গাছ প্রতিক নিয়ে চমক দেখালেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ৪২৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয়ীর মাধ্যমে কুলাউড়ার মানুষ বরাবরই প্রমাণ করছে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বিপরীতে তাদের অবস্থান। সময়ের প্রয়োজনে কুলাউড়ার মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেন।
কুলাউড়ায় নৌকা আর ধানের শীষের প্রতি মানুষের অনাস্থা; কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান
0
