কুলাউড়ায় শোকের তাজিয়ায় প্রতিবাদের ধ্বনি

চয়ন জামান: যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শনিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন সারাদেশে ন্যায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত নবাব বাড়ী হায় হুসেন হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে ওঠে। কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডি স্মরণে প্রতি বছর ১০মহররম নানা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা আর ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমেই শোক পালন করেন সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। তবে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ দিনটি স্মরণে ১ম মহররম থেকে শুরু করে ১০ মহররম পর্যন্ত মার্সিয়া মাতম, মজলিশ, জারিসহ তাদের বয়ে চলা নিজস্ব ভঙ্গিমায় বেশ ঘটা করেই তা পালন করেন। প্রতি বছরই দেশের ২য় বৃহৎ ও সিলেট বিভাগের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান আয়োজন হয় কুলাউড়ার পৃথিমপাশার নবাব বাড়িতে। এবছরও একই অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ১০ মহররম। তবে গত বছরের সাথে এবছরের প্রধান তফাৎ ছিল কেবলই শোকের তাজিয়ায়। এবারের তাজিয়ায় যে মিশে আছে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে শুক্রবার গভীর রাতে নিহত হওয়া কিশোর সাজ্জাদ হোসেনের রক্ত। সুন্নি হয়েও মহরমের শোকের তাজিয়ায় সামিল হতে চেয়ে তার নিহত হওয়ার প্রতিবাদেরই যেন দেশের আরেক প্রান্ত কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশায় অনুষ্ঠিত এ তাজিয়ায় সামিল হতে নেমেছিল ক্ষুব্ধ জনতার উন্মাতাল ঢেউ। শুধু মৌলভীবাজারেরই নয় বরং দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেও শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এখানে ছুটে আসেন। বৃহত্তর সিলেটের নবাব আলী আমজদ এর পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত নিজ বাড়ির সামনে স্থাপিত ইমাম বাড়ায় হায় হুসেন, হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমে সরব হয়ে উঠে। সন্ধ্যা হতেই দলে দলে বিভক্ত হয়ে জারি, নোওয়া, মজলিশ ও দোয়া অংশ গ্রহণ করেন। ১ম মহররম মজলিশ, মিলাদ, মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমেই শেষ হয় বরণ উদ্যাপন। ২ মহরম থেকে শুরু করে ৯ মহরম পর্যন্ত সকাল দুপুর ও গভীর রাত পর্যন্ত চলে মজলিশ, মার্সিয়া মাতম, জারি, নোওয়া, সাথে চলে রোজা ও নফল নামাজ ও ইবাদত বন্দেগী। ১০ মহররম তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমেই সমাপ্ত হয় আনুষ্ঠানিক শোক পালনের কার্যক্রম। ছোট বড় প্রায় ৪০টি তাজিয়া নিয়ে মিছিল সহকারে যাওয়া হয় স্থানীয় কবরস্থানে। নবাব বাড়ির ইমাম বাড়ার মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালনকালে ব্যস্ত সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাস খানের সাথে আলাপকালে এ প্রতিবেদকের কাছে তিনিও জানালেন মনের তীব্র ক্ষোভ। বললেন, মৌলবাদী অপশক্তিরা যত চেষ্টাই করুক না কেন এই দেশে শিয়া-সুন্নির মধ্যে যে অকৃত্তিম ভাতৃত্ববোধ রয়েছে সেটা কেউই নষ্ট করতে পারবে না। বলা বাহুল্য এদিন (১০ মহরম) নবাব বাড়ির ইমাম বাড়ার প্রাঙ্গণসহ গোটা পৃথিমপাশা এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নবাব বাড়ি সামনে মেলা বসে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কৌতুহলী অনেকেই চলে যান চাকু ও চুরি দিয়ে শরীরে রক্ত ঝরিয়ে হায় হুসেন হায় হুসেন মার্সিয়া মাতমের মাধ্যমে কারবালার সেই শোক স্মৃতি স্মরণের দৃশ্য দেখতে।

Post a Comment

Previous Post Next Post