![]() |
দুনিয়া কাঁপানো আইএস জঙ্গি মৌলভীবাজারের রুহুল আমিন |
নিউজ ডেস্কঃ পিৎজা আর সেলুনের দোকানে চাকরি করে সংসার চালাতো শান্তশিষ্ট যুবক রুহুল আমিন। মৌলভীবাজারের ছেলে রুহুল ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পাড়ি জমায় পরবাসে। কিন্তু তখন কি কেউ ভেবেছিল এই রুহুল একদিন হয়ে উঠবে দুনিয়া কাঁপানো আইএস জঙ্গি? বিবিসি আর টেলিগ্রাফের মত বিশ্বমিডিয়া তার জঙ্গি হয়ে উঠার ওপর তৈরি করবে বিশেষ প্রতিবেদন? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তার নাম নিবেন মুখে? কিন্তু অবিশ্বাস্য কথাগুলোই বাস্তবে রূপ দিলেন রুহুল। যুক্তরাজ্যের চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলায় সিরিয়ায় নিহত ২ ব্রিটিশ নাগরিক রিয়াদ খান ও রুহুল আমিন ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ বলে জানা গেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে ড্রোন হামলায় ৩ ব্যক্তি নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে জানান, সিরিয়ায় ব্রিটিশ জঙ্গি-জিহাদি নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো এটাই ১ম ড্রোন হামলা। সিরিয়ায় ব্রিটেনের ড্রোন ও আমেরিকার বিমান হামলায় নিহত হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহুল আমিনসহ ৩ জঙ্গি। জানা গেছে, রুহুল আমিন এক সময় পিৎজা শপ ও সেলুনে চাকরি করতো। একটা সময় বেশ সাদামাটা জীবনযাপনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন রুহুল। তবে তার জঙ্গি হওয়া নিয়ে গতকাল বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফ জানায়, ব্রিটেনের রানী ২য় এলিজাবেথকেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল নিহত জঙ্গিদের। রুহুল আমিনের বাল্যবন্ধু স্টিফেন মারভিন বিবিসিকে জানান, ‘রুহুল আমিনের কোনো মৃত্যুভয় ছিল না। গত এক-দেড় বছরে সে ছিল একেবারে ভিন্ন এক ব্যক্তি। যদিও আমরা বাল্যকাল থেকে বন্ধু, তারপরও তার জন্য আমার কোনো সহানুভূতি নেই। কিন্তু তার পরিবারের জন্য আমার দুঃখ হয়।’ ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে সিরিয়া চলে যাওয়ার পরও রুহুল আমিনের সঙ্গে স্টিফেন মারভিনের যোগাযোগ ছিল বলেও জানান মারভিন। বলতে থাকেন, সিরিয়ায় চলে যাওয়ার পর ১ম যখন আমি তাকে ফোন করি, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে গুলির শব্দ শুনতে পাই। রুহুল আমিন বলছিল, সে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আছে। তিনি এও বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার গুলি ভয় করে না? উত্তরে ওর জবাব ছিলো, আমি যদি মরি তো আল্লাহর কাছে চলে যাব। শুনে আমি বেশ ধাক্কা খেয়েছিলাম। ওর মধ্যে মৃত্যুর কোনো ভয় ছিল না।’ রুহুল আমিন, রিয়াদ খান এবং জুনাইদ হোসাইন নামে ৩ ব্রিটিশ জঙ্গিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার কথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে জানান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এ নিয়ে এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে বিতর্কও চলছে। বিরোধী রাজনীতিকরা দাবি তুলেছেন, কিভাবে এই ড্রোন হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনকি তাদের দাবি, ড্রোন হামলার বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। রুহুল আমি মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে উঠেছে স্কটল্যান্ডের এবারডিনে। ২০১৪ সালের জুনে সিরিয়া থেকে ইন্টারনেটে আপলোড করা এক ভিডিওতে রুহুল আমিনকে দেখা যায়- অপর ২ জঙ্গি রিয়াদ খান এবং নাসের মুথানার পাশে বসে থাকতে। এবারডিনে রুহুল আমিনের বন্ধুরা জানিয়েছে, এক সময় সে ক্রিকেট খেলতো। সঙ্গীত ভালোবাসতো। নিয়মিত নাইট ক্লাবেও যেত। সিরিয়া যাওয়ার আগে কাজ করেছে পিৎজা শপ, সেলুন এবং মসলার দোকানে। স্টিফেন মারভিন জানিয়েছেন, ‘রুহুল আমিন জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে বার্মিংহামে আসার পর। আমি শুনেছি, যে ওর মগজ ধোলাই করা হয়েছে। বার্মিংহামে কিছু লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারা তাকে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। সিরিয়া গিয়ে ও ১টা কোরআন ক্যাম্পে যোগ দেয়। সেখানে তিন মাস ছিল। এরপর তাকে আরেকটা সামরিক ক্যাম্পে পাঠানো হয় তিন মাসের জন্য।’ তিনি এও বলেন, রুহুল আমিন যেভাবে জঙ্গিতে পরিণত হলো, সেখানে তার পরিবারের কোনো দোষ নেই।