কুলাউড়ায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজি

কুলাউড়ায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজি
নিউজ ডেস্কঃ চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকেই কুলাউড়ায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজি শুরু হয়েছে। রাত কিংবা দিনে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে বাকি ১১ ঘণ্টা থাকে অন্ধকার। গ্রাম এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২২ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। হঠাৎ করে এমন বিদ্যুৎ বির্পযয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পুরো উপজেলার মানুষ। বিদ্যুৎহীনতায় আউস ধানের মওসুম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ক্ষেত থেকে সংগৃহীত বৃষ্টিভেজা পাকা ধানগুলো বিদ্যুৎচালিত (ফ্যান) পাখা দিয়ে শুকানো হতো। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চা বাগানের উৎপাদন। ছোট ছোট মিল কারখানাগুলোর উৎপাদন রয়েছে বন্ধ। বেকার হয়ে পড়ছেন শ’ শ’ দৈনিক মজুরির শ্রমিক। আর্থিকভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অপরদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় পিয়াজ সংরক্ষণ করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ না থাকায়। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানি সংকট আর প্রচণ্ড গরমে চরম বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। প্রায় ১০ দিন থেকে এমন বিদ্যুৎহীনতায় চরম ভোগান্তিতে উপজেলাবাসী। গতকাল কুলাউড়ার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এমন তথ্য আর বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার পরিসংখ্যান জানালেন সংশ্লিষ্ট দুর্ভোগগ্রস্তরা। গ্রাহকরা জানান, গেল কয়েক মাস থেকে দিন ও রাতে নিয়মিত ৫-৬ বার লোডশেডিং কিংবা মেরামতজনিত কারণে বিদ্যুৎ না থাকলেও এমন স্থায়ী বিদ্যুৎহীনতার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাদের। গত ১৮ই আগস্ট বিকালে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিপণন কেন্দ্র (গ্রীড স্টেশন) থেকে শহর এলাকায় মাইকিং করে জানানো হয় যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য আগামী ৩ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে এ তিনদিন পর থেকে আবার যথারীতি বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকবে। এই ৩দিনের জন্য তারা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করলেও তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও আজ প্রায় এক সপ্তাহ হলো এখনও গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।  গ্রাহকরা বলেন, এ বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন সদুত্তরও দেন না। অসহায় গ্রাহকরা নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের বিষয়টি অবহিত করেও ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ তারা এর কোন সঠিক জবাব দিতে পারছেন না। উল্টো এ বিষয়ে তারা তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন, এমনকি অনেক গ্রাহকে এনিয়ে কথা না বলতে হুমকি দিয়ে মামলার ভয়ও দেখাচ্ছেন। গ্রাহকরা জানান, নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর কুলাউড়ায় আসার পর থেকেই গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নতুন ধারা শুরু হয়। তিনি যোগদানের ৩ দিনের মাথায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে তথ্য দেয়া নিয়ে দুর্ব্যবহার করেন পরে তার ভুল বুঝতে পেরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ওই সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা চান। এই ঘটনা দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে এ রকম আরও একাধিক ঘটনা তিনি ঘটান যা মামলা পর্যন্ত গড়ায়। গ্রাহকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা কুলাউড়া বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে ভৌতিক বিল দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ অফিসের দেয়া বিলের কোন মিল থাকে না। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার বিষয়টি অবগত করালেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। বরং অভিযোগ রয়েছে নতুন সংযোগ দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অন্যদিকে, অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ চলে গেলে অভিযোগ কেন্দ্র থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কেউই গ্রাহকদের ফোন রিসিভ করেন না। আর ফোন ধরলেও গ্রাহকদের সঙ্গে তারা দুর্ব্যবহার করেন। কুলাউড়া বিদ্যুৎ অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ১৮ তারিখ থেকে কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হলো নতুন করে একটি সিএনজি স্টেশন ও একটি চা বাগানে দু’টি সংযোগ দেয়ায়। মোটা অংকের টাকা পেয়ে নিয়ম-বহির্ভূত নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা এই সংযোগ দেন। এতে ৫ এমএম ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমারের ধারণ ক্ষমতার বাইরে লোড চলে যাওয়ায় তা বিকল হয়। আর এই কারণেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় কুলাউড়ার গ্রাহকদের। কুলাউড়া শহরের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম, জায়েদ আহমদ, সোহাগ আহমদ, মোক্তাদির হোসেন, ফয়ছল আহমদ ব্রাহ্মণবাজারের ব্যবসায়ী মো. মঈন উদ্দিন, ছারওয়ার আলম বেলাল, বিমলেন্দু সেন কৃষণ, আবদুল হাই শামীম, অজিউদ্দিন, রমিজউদ্দিন, মাছুম চৌধুরী, মিনহাজ উদ্দিন আহমদ কমরু, সুবেক খান, বেলাল আহমদ, সাইদুল ইসলাম লাকী, আবদুস সামাদ চৌধুরী রুপন, শ্রীপুর বাজার এলাকার আবদুল লতিফ, মোক্তাদির হোসেন মনা, নাজমুল ইসলাম মিটু, আবদুুল আজিজ ইমন, হারুন মিয়াসহ অনেকেই জানান বিগত দিনে লোডশেডিং আর গত ১৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া টানা বিদ্যুৎহীনতা তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা। তারা বলেন, সাব-স্টেশন থেকে গ্রিড স্টেশনে উন্নীত হওয়ার পর আশা ছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবো এখন দেখছি তার উল্টোটা। এ বিষয়ে কুলাউড়া বিদ্যুৎ অফিসের (গ্রিড স্টেশনের) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে এমন সমস্যা ছিল। মেরামত করা হয়েছে। এখন থেকে অনেকটা সমাধান হবে বলে আশা করছি। আজ (২৭ আগষ্ট) থেকে আর এ সমস্যা আর থাকবে না । তিনি জানান, ৫ এম এবিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার হঠাৎ করে বিকল হওয়াতে এই সমস্যা ছিল এখন ওখানে ১০ এম বিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে আশা করছি এ সমস্যা আর নাও হতে পারে । তবে তার উপর ও তার সহকর্মীদের উপর গ্রাহকদের আনীত অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post