হিরোশিমা দিবসে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার ডাক

হিরোশিমা দিবসে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার ডাক
অনলাইন ডেস্কঃ জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন পরমাণু বোমা বর্ষণের ৭০তম বার্ষিকী আজ। নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা আর গভীর বেদনা নিয়ে জাপানিরা পালন করছে মানব ইতিহাসের এই কালো দিনটিকে। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে হিরোশিমার পিস পার্কে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহবান জানান। বৃহস্পতিবার ভোরে হিরোশিমা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় জাপানের হিরোশিমা নগরীর বাসিন্দাদের। এরপর মোতোইয়াসু নদীতে লণ্ঠন ভাসান হিরোশিমার নাগরিকেরা। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, ঠিক যে সময় ৭০ বছর আগে বোমা ফেলা হয়েছিল হিরোশিমায়, তখন ঘণ্টা বাজিয়ে সে ঘটনা স্মরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। হিরোশিমার পিস পার্কে আগত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেন, পারমাণবিক বোমা শুধু হাজার হাজার মানুষকেই হত্যা করেনি, যারা বেঁচে ছিল পরবর্তী সময়ে তাদেরকেও অমানুষিক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেন, 'ধ্বংসস্তূপ থেকে হিরোশিমা আবারও জেগে উঠেছে এবং সংস্কৃতি আর সমৃদ্ধির নগরী হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজেকে মেলে ধরেছে। হিরোশিমা ঘটনার ৭০ বছরে দাঁড়িয়ে আমি আবারো বিশ্ব শান্তির প্রতি জোর দিতে চাই। আসুন আমরা সকলে মিলে একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলি।' প্রধানমন্ত্রী অ্যাবে যখন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের কথা বলছেন তখন সেই হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষেরা স্মৃতিচারণ করছেন, সেই ভয়াল বিভীষিকাময় সকালের। তাদেরই একজন পরমাণু জাদুঘরের সাবেক প্রধান হিরোশি হারাদা জানালেন, যতদিন মানব সভ্যতা টিকে থাকবে, যতদিন যুদ্ধ থাকবে, ততদিন হিরোশিমার মানুষকে ওই স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। হিরোশি হারাদা বলেন, 'পরমাণু বোমা নিয়ে আরও কথা বলতে হবে, আরো সোচ্চার হতে হবে এর বিরুদ্ধে। ওই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা মরে গেলেও লড়াইটা জারি রাখতে হবে। কারণ ক্ষতটা আমি এখনো বয়ে চলেছি।' বেঁচে যাওয়া এ নারী জানান, এতদিন আমি আমার পরিবারের কাউকেই সেই দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্মকে সবকিছু জানানো উচিত। কিভাবে মানবতা হুমকির মুখে পড়ে তা তাদের জানতে হবে। বিশ্বে পারমাণবিক বোমার প্রথম ওই হামলার ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহবানে জাপান সাড়া না দেয়ায় তার নির্দেশেই ঠাণ্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় ওই হামলা। ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আগুনের গোলা নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে এক মাইল এলাকা জুড়ে। এতে মারা যায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। জাপানকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে এরপর ৯ই আগস্ট দেশটির নাগাসাকি শহরেও পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় নিহত হয় ৭০ হাজার মানুষ।

Post a Comment

Previous Post Next Post