শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে

শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী
শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে
নিউজ ডেস্কঃ কাগজী লেবুর চাষাবাদ লাভ জনক হওয়ায় সিলেটের শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় কাগজী লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট বিভাগের বানিজ্যিক কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে এখন কাগজী লেবুর ব্যাপক সমারোহ। এখান থেকে লাখ লাখ কাগজী লেবু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রসাধনী ও কেমিকেল কোম্পানী গুলো কিনে নিচ্ছে কাগজী লেবু। তাছাড়া বেভারেজ কোম্পানীও লেমন কোল্ড ড্রিঙ্কস এর জন্য বিপুল পরিমান কাগজী লেবু ক্রয় করছে। বছরের সব সময় কাগজী লেবু উৎপাদন হলেও মৌসুমে উৎপাদনের পরিমান বেড়ে যায় কয়েকগুন। ফলে মৌসুমে কাগজী লেবুর দামও অনেক হ্রাস পায়। প্রতি বছরে শ্রীমঙ্গলে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার কাগজী লেবু বেচা-কেনা হয়ে থাকে। দেশের চা শিল্পাঞ্চল মৌলভীবাজার জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল চায়ের পরেই কাগজী লেবুর স্থান। টিলা ও সমতল ভুমিতে কাগজী লেবুর বাগান দিগন্ত বিস্তৃত। উচু-নীচু পাহাড়ী টিলা, পাহাড়ের ঢালু, ফসলী জমির মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনাসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কাগজী লেবুর বাগান। আদিকাল থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির লেবুর চাষ কম-বেশী হলেও বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে। লাভজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট উপজেলায় কাগজী লেবুর ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে। লাভজনক হওয়াতে লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গলেই এর চাষাবাদ বেশী হয়ে থাকে। যা অন্যান্য অঞ্চলের উৎপাদিত কাগজী লেবুর চেয়ে স্বাদ, গন্ধ ও সাইজে আলাদা। কাক ঢাকা ভোর থেকে দিনভর জীপ, টেম্পু, ট্রাক ও ঠেলা গাড়ীতে করে বিপুল পরিমান কাগজী লেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসছে। এখান থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমানের কাগজী লেবু নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবুর চাহিদা দেশের আভ্যন্তরে যেমন রয়েছে তেমনি বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। প্রতি বছরেই লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু রপ্তানী করা হয়ে থাকে। চট্রগ্রাম ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের পাহাড়ী এলাকায় কাগজী লেবুর চাষ করা হলেও তা শ্রীমঙ্গলের লেবুর মত উন্নত ও মানসম্পন্ন নয়। কাগজী লেবুর বাগান মালিক মহালদার ফুল মিয়া জানান, চলতি বছরে কাগজী লেবুর ফলন ভাল হয়েছে কিন্তু দাম আশানুরুপ পাচ্ছেন না। একই অভিমত ব্যক্ত করলেন বাগান মালিক শ্রীমঙ্গল পৌরচেয়ারম্যান মোঃ আহাদ মিয়া। তাছাড়া কাগজী লেবুর বাগান মালিক আ·ফ·ম আব্দুল হাই ডন সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেন লেবুর ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু সার সংকট না থাকলে ফলন আরও বেশী হতো। বাজারে সার কিনতে সমস্যা হয়। চাহিদামত সার পাওয়া যায়না। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত কাগজী লেবু ছাড়াও উন্নত মানের চায়না, জারা, এলাচি, সিডলেস লেবু উৎপাদন হয়। দেশের লেবুর চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবুর বাগান থেকে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ২৫ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ও সমতল ভুমিতে কাগজী লেবুর চাষাবাদ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। লেবুর চাষ লাভজনক হওয়ায় রীতিমত প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে লেবু চাষ নিয়ে। অনেকে আনারস চাষ বাদ দিয়ে লেবু চাষের প্রতি ঝুঁেক পড়েছে। একাধিক লেবু চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় লেবু চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা খুবই ব্যয় বহুল। বৈদ্যুতিক নলকুপের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানো হয়। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় অসংখ্য নতুন নতুন কাগজী লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। কাগজী লেবুর চাষাবাদ বৃদ্ধিতে একদিকে হচ্ছে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অপর দিকে দেশের বাইরে লেবু রপ্তানী করে সরকার পাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। লেবু চাষীদের সমস্যা নিরসনসহ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিকুলতা দুর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী।

Post a Comment

Previous Post Next Post