![]() |
| মৌলভীবাজারের আদালতপাড়া অচল হাজার মানুষের দুর্ভোগ |
ইমাদ উদ দীন: “বাবারে, এখন ওখানে এসে কি লাভ? উকিলরা আজ-কাল করতে করতে দেড় মাস পার করছে। কিন্তু কোর্টতো আর বসে না, বিচারও পাই না। নিজের পুঁজি শেষ তারপরও মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে প্রায় দিনই ওখানে আসি আমার বুকের মানিককে মুক্ত করব বলে। কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পাচ্ছি না।” গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কমলগঞ্জের রাজকান্দি গ্রামের মৃত রওশন আলীর বিধবা স্ত্রী আয়রুন বেগম (৫২)।তার ছেলে আবু বকর (২৬) একটি মিথ্যা মামলায় প্রায় আড়াই মাস হাজতবাস করলেও আদালতের বিচার কাজ বন্ধ থাকায় তার জামিন নিতে পারছেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেটি অসুস্থ অবস্থায় কারা ভোগ করছে। আয়রুন বেগমের মতো দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী। আর বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির ৩০১ জন সদস্য ও তাদের সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় হাজারখানেক লোকজন ও কয়েদি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আদালত পাড়ার ব্যবসায়ীরাও। প্রায় ২ মাস থেকে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের আদালাত পাড়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেওয়ানি, ফৌজদারি, নারী-শিশু, এন্টিকরাপশন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, পারিবারিক আদালত, অর্পিত সম্পত্তি ও জমিজমা সংক্রান্ত সব মিলিয়ে প্রতিদিনই কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ নতুন মামলা তালিকাবদ্ধ হতো। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলাও নিষ্পত্তি হতো। প্রতিদিনই জামিনযোগ্য অপরাধে আটক কারাবাসকারী ৮-১০ আসামি জামিনও পেতেন। এতে করে কারাগারে হাজতিদের বাড়তি চাপ কমতো। কিন্তু প্রায় ২ মাস ধরে বিচারকাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের অন্ত নেই সংশ্লিষ্টদের। একদিকে জন দুর্ভোগ অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাদের লোকদের আদালত থেকে জামিনের জন্য এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ৩১৬ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার কয়েদি রয়েছে। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে ১১০ জন। আর অন্যরা জামিনযোগ্য অপরাধে আটক রয়েছে । সম্প্রতি হরতাল চলাকালে বেশ কিছু লোক পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। জামিনযোগ্য ধারায় আটক অনেক লোকও জামিনে মুক্তি পাচ্ছে না আদালতে জামিন আবেদন করতে না পারায়। এদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক লোকজন মধ্যে চলতি সনের এসএসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী, অসুস্থ, বৃদ্ধ- এমনকি মহিলাও রয়েছেন। আছেন রাজনৈতিক কর্মীরাও।
সরজমিন মৌলভীবাজার জেলা দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে কথা হয় বিচারপ্রার্র্থী অনেকের সঙ্গে। যাদের অধিকাংশ স্বজন জেলহাজতে রয়েছেন জামিনযোগ্য অপরাধে। কিন্তু আদালতে ধরনা দিতে দিতে এর কোন সুরাহা হচ্ছে না আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোদমে না চলায়।
কথা হয় শ্রীমঙ্গল শাহীবাগ এলাকার মাহবুর রহমানের (৪৩) সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বোন সাহানা বেগম একটি মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। আদালতের বিচার কার্যক্রম না চলায় তার অসুস্থ বোনের জামিনের জন্য আবেদন করতে পারছেন না।
কুলাউড়ার কাউকাপন এলাকার ২ কন্যাসন্তানের জননী মিনা বেগম (৩০) এসেছেন তার স্বামী পতনঊষার ছালিক মিয়ার বিরুদ্ধে তারই দায়ের করা একটি মামলার আপস নিষ্পত্তির মাধ্যমে তার জামিন নিতে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হরতালের দুর্ভোগ মাড়িয়ে আদালত চত্বরে আসলেও আদালত না বসায় কোন কাজই হচ্ছে না। তারা সকলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে দ্রুত এমন সঙ্কট নিরসনের দাবি জানান।
জেলা কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা দায়রা জজ ও জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকরা কারাগার পরিদর্শনে গেলে কয়েদিরা তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে জোর আবেদন জানান। তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে তারা তাদের মানবিক আবেদনটি বিবেচনায় নেবেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রমাকান্ত দাশগুপ্ত ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাঈয়েদ মইন উদ্দিন জুনেল বলেন, ১৯৯০ সালে জেলা আইনজীবী সমিতিতে একটি রেজুলেশন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যেখান হরতালের সময় আদালতের কার্যক্রমে বিরতি রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদের দুর্ভোগের চিন্তা থেকে মূলত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যে কারণে হরতাল ও অবরোধে মৌলভীবাজারের আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এস এম আজাদুর রহমান ও অ্যাডভোকেট রাধাপদ দেব সজল বলেন, ১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। তারা বলেন, তখন এভাবে লাগাতার হরতালও ছিল না। এখন বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগবে এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন।
তবে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে গতকাল সভা ডেকেছিল সমিতি। সাধারণ সভায় সিভিল থেকে ৫ জন ও ফৌজদারি থেকে ৫ জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী বুধবার থেকেই এই ১০ জন সদস্য কোন ধারার মামলা পরিচালনায় আইজীবীরা সহযোগিতা করবেন তা ঠিক করবেন।
মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, কোন ব্যক্তি বা দলীয় সিদ্ধান্তে এ রেজুলেশনটি হয়নি। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধার্থে হরতাল অবরোধে যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় এমনটি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্তটি এখন বলবৎ আছে। জেলা আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মাসুকুর রহমান ও সদস্য মো. আবদুল খালেক বলেন, বিচারপ্রার্থীরা প্রতিদিনই আদালত চত্বরে ধরনা দিচ্ছেন, আমরা প্রতিদিনই তাদের একই কথা জানাচ্ছি এতে তারাও যেমন বিরক্ত হচ্ছেন তেমনি আমরাও। আদালতে বিচারিক কার্যক্রম না চলায় আমরা সকলেই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেওয়ানি, ফৌজদারি, নারী-শিশু, এন্টিকরাপশন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, পারিবারিক আদালত, অর্পিত সম্পত্তি ও জমিজমা সংক্রান্ত সব মিলিয়ে প্রতিদিনই কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ নতুন মামলা তালিকাবদ্ধ হতো। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলাও নিষ্পত্তি হতো। প্রতিদিনই জামিনযোগ্য অপরাধে আটক কারাবাসকারী ৮-১০ আসামি জামিনও পেতেন। এতে করে কারাগারে হাজতিদের বাড়তি চাপ কমতো। কিন্তু প্রায় ২ মাস ধরে বিচারকাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের অন্ত নেই সংশ্লিষ্টদের। একদিকে জন দুর্ভোগ অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাদের লোকদের আদালত থেকে জামিনের জন্য এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ৩১৬ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার কয়েদি রয়েছে। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে ১১০ জন। আর অন্যরা জামিনযোগ্য অপরাধে আটক রয়েছে । সম্প্রতি হরতাল চলাকালে বেশ কিছু লোক পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। জামিনযোগ্য ধারায় আটক অনেক লোকও জামিনে মুক্তি পাচ্ছে না আদালতে জামিন আবেদন করতে না পারায়। এদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক লোকজন মধ্যে চলতি সনের এসএসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী, অসুস্থ, বৃদ্ধ- এমনকি মহিলাও রয়েছেন। আছেন রাজনৈতিক কর্মীরাও।
সরজমিন মৌলভীবাজার জেলা দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে কথা হয় বিচারপ্রার্র্থী অনেকের সঙ্গে। যাদের অধিকাংশ স্বজন জেলহাজতে রয়েছেন জামিনযোগ্য অপরাধে। কিন্তু আদালতে ধরনা দিতে দিতে এর কোন সুরাহা হচ্ছে না আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোদমে না চলায়।
কথা হয় শ্রীমঙ্গল শাহীবাগ এলাকার মাহবুর রহমানের (৪৩) সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বোন সাহানা বেগম একটি মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। আদালতের বিচার কার্যক্রম না চলায় তার অসুস্থ বোনের জামিনের জন্য আবেদন করতে পারছেন না।
কুলাউড়ার কাউকাপন এলাকার ২ কন্যাসন্তানের জননী মিনা বেগম (৩০) এসেছেন তার স্বামী পতনঊষার ছালিক মিয়ার বিরুদ্ধে তারই দায়ের করা একটি মামলার আপস নিষ্পত্তির মাধ্যমে তার জামিন নিতে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হরতালের দুর্ভোগ মাড়িয়ে আদালত চত্বরে আসলেও আদালত না বসায় কোন কাজই হচ্ছে না। তারা সকলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে দ্রুত এমন সঙ্কট নিরসনের দাবি জানান।
জেলা কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা দায়রা জজ ও জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকরা কারাগার পরিদর্শনে গেলে কয়েদিরা তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে জোর আবেদন জানান। তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে তারা তাদের মানবিক আবেদনটি বিবেচনায় নেবেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রমাকান্ত দাশগুপ্ত ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাঈয়েদ মইন উদ্দিন জুনেল বলেন, ১৯৯০ সালে জেলা আইনজীবী সমিতিতে একটি রেজুলেশন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যেখান হরতালের সময় আদালতের কার্যক্রমে বিরতি রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদের দুর্ভোগের চিন্তা থেকে মূলত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যে কারণে হরতাল ও অবরোধে মৌলভীবাজারের আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এস এম আজাদুর রহমান ও অ্যাডভোকেট রাধাপদ দেব সজল বলেন, ১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। তারা বলেন, তখন এভাবে লাগাতার হরতালও ছিল না। এখন বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগবে এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন।
তবে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে গতকাল সভা ডেকেছিল সমিতি। সাধারণ সভায় সিভিল থেকে ৫ জন ও ফৌজদারি থেকে ৫ জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী বুধবার থেকেই এই ১০ জন সদস্য কোন ধারার মামলা পরিচালনায় আইজীবীরা সহযোগিতা করবেন তা ঠিক করবেন।
মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, কোন ব্যক্তি বা দলীয় সিদ্ধান্তে এ রেজুলেশনটি হয়নি। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধার্থে হরতাল অবরোধে যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় এমনটি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্তটি এখন বলবৎ আছে। জেলা আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মাসুকুর রহমান ও সদস্য মো. আবদুল খালেক বলেন, বিচারপ্রার্থীরা প্রতিদিনই আদালত চত্বরে ধরনা দিচ্ছেন, আমরা প্রতিদিনই তাদের একই কথা জানাচ্ছি এতে তারাও যেমন বিরক্ত হচ্ছেন তেমনি আমরাও। আদালতে বিচারিক কার্যক্রম না চলায় আমরা সকলেই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
