করাতকলে নিধন হচ্ছে চা বাগানের ছায়াবৃক্ষ

করাতকলে নিধন হচ্ছে চা বাগানের ছায়াবৃক্ষ
করাতকলে নিধন হচ্ছে চা বাগানের ছায়াবৃক্ষ
করাতকলে নিধন হচ্ছে চা বাগানের ছায়াবৃক্ষ: রাবার, চা বাগান আর ছায়াবৃক্ষ হুমকির মুখে পড়ছে।প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একদিকে যেমন নিধন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল অপরদিকে অবৈধভাবে স্থাপিত করাত কলের কারণে চোরাই পথে নির্মূল হচ্ছে এসব গাছ। সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন যারা এগুলো দেখভাল করবেন খোদ তারাই মাসোহারা পেয়ে রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন। কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় রয়েছে সর্বমোট ৫৬টি করাতকল। এরমধ্যে ২৫টি করাতকলের কোন বৈধতা নেই। উচ্চ আদালতে এসব অবৈধ করাতকল মালিকদের দায়েরকৃত স্থগিতাদেশের (রিট আবেদন) বলেই দীর্ঘদিন থেকে চালানো হচ্ছে এসব। দিন দিন অবৈধ করাতকলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধ মিল মালিকরা যেমন পড়েছেন বিপাকে, তেমনি হুমকির মুখে বনাঞ্চল ও পরিবেশ। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, উপজেলার বিলের পার গ্রামের তজমুল আলী সীমান্ত আইন ও বন আইন অমান্য করে মানগাঁও গ্রামে একটি করাতকল স্থাপন করেছেন। করাতকল নীতিমালা অনুসারে সীমান্ত থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু তজমুল আলী সীমান্ত থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকলটি স্থাপন করেন। বনবিভাগের কাছে আবেদন করেই অনুমতি পাওয়ার আগে ডিজেল পাম্প দিয়ে গত ২৫শে ডিসেম্বর থেকে তিনি করাতকলটি চালু করেন। এলাকাবাসী অবশ্য এ প্রসঙ্গে বিজিবি ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে তিনি পীরের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে চানগাঁও মৌজায় একইভাবে একটি করাতকল স্থাপন করেন। বিদ্যালয় কমিটির প্রতিবাদের মুখে তিনি মৌলভীবাজার সাব-জজ আদালতে একটি স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয় কমিটির প্রতিবাদের মুখে করাতকলটি কেওলাকান্দি মৌজায় সরিয়ে নেন। আদালতের কোন আদেশে কিংবা বনবিভাগের কোন অনুমতি না নিয়ে করাতকলটি সরানোয় নীতিমালা অনুসারে তার এই করাতকলটিও অবৈধ করাতকলের তালিকাভুক্ত। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের উত্তর রবিরবাজারে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত হয়ে উৎপাদন শুরু করে দু’টি করাতকল। বনবিভাগ করাতকল দুটি নির্মাণ করার কোন সম্মতি প্রদান করেনি। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সেই নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে, প্রভাব খাটিয়ে করাতকল দুটি চালিয়ে যাচ্ছেন মিলের
মালিকরা। বনবিভাগ সূত্র জানায়, কুলাউড়ায় মোট ৫৬টি করাতকল রয়েছে। তারমধ্যে ৩১টির বৈধ লাইসেন্স রয়েছে এবং বাকি ২৫টি অবৈধ বা হাইকোর্টে রিট করে চলছে। অবৈধ করাতকলগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্রও নেই
বলে জানা গেছে। বনবিভাগ সূত্র আরও জানায়, করাতকল স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রথমে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বরাবর আবেদন করতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে ডিএফও এক বছর মেয়াদি (নবায়ন সাপেক্ষে) অনুমতিপত্র দেন। ১৯৯৮ সালে করাতকল বিধিমালায় সংরক্ষিত বন এলাকার ১০ কিলোমিটার, সীমান্ত এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার এবং উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের অভ্যন্তরে কোন করাতকল স্থাপন করা যাবে না উল্লেখ করে আইন পাস হয়। কিন্তু এসব বিধিমালা না মেনেই কুলাউড়ায় প্রতিবছর ৪-৫টি করাতকল নির্মিত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, অবৈধ করাতকল মালিকরা বনবিভাগের অনুমতি না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। কৌশলে তারা বনবিভাগের ওপর দোষ চাপিয়ে করাতকল চালুর অস্থায়ী অনুমতি নেন আদালতের। আবার কেউ কেউ বনবিভাগের আদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে চালিয়ে যাচ্ছেন করাতকল। তবে বৈধ হোক আর অবৈধ হোক করাতকল মালিকরা নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোহারা দিতে হয় বনবিভাগকে। এরফলে অবৈধ কাঠ আটক অভিযানমুক্ত থাকে করাতকলগুলো। স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, করাতকল মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। যেভাবে করাতকল হচ্ছে তাতে মিলের শ্রমিক আর বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে এসব করাতকল মালিকরা সরাসরি কাঠ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এতে শুধু বন উজাড় হবে তা নয় হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ। এব্যাপারে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রভাত কুসুম আচার্য্য জানান, শরীফপুর ইউনিয়নের মানগাঁও গ্রামের করাতকলটি তিনি সরজমিন দেখেছেন। করাতকলটি নীতিমালা বহির্ভূত। এর মালিক তজমুল আলী একজন চিহ্নিত মামলাবাজ। অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না। তবে করাতকলগুলোর মামলার অবস্থান যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

সুত্র: মানব জমিন 
Previous Post Next Post